বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একটু উদার হোন, ব্রিটেনে ফেরার সুযোগ দিন: আইএসবধূ শামীমা

  •    
  • ১৮ মার্চ, ২০২১ ১৮:১৩

সবশেষ ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে রোদচশমা পরা এখনকার শামীমাকে। জানা গেছে, পর্দা, বোরকা, হিজাব, নেকাব ছেড়ে পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক ধরেছেন তিনি। দেশ ছাড়ার আগে যেমন ছিলেন, ফিরে গেছেন সেই জীবনচর্চায়।

সিরিয়ায় তিন শিশুসন্তানের মৃত্যুর পর আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন আইএসবধূ শামীমা বেগম। এখন যুক্তরাজ্যে ফিরতে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছেন তিনি; চান স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আর একটা সুযোগ।

সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে শামীমার জীবনের ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে তার এ আবেদন।

ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ধারণ করা তথ্যচিত্রটিতে শামীমা বাঁচার জন্য ‘দ্বিতীয় সুযোগ’ চেয়েছেন। ‘তার সম্পর্কে আগে যা কিছুই জানা গেছে, সেসব ভুলে যাওয়ার’ অনুরোধ করেছেন তার দেশের মানুষকে।

২০১৫ সালে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দিতে দুই বান্ধবীকে নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় যান শামীমা। সেখানে গিয়ে বিয়ে করেন আইএসে যোগ দেয়া ধর্মান্তরিত এক ডাচ যুবককে।

তখন শামীমার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। এখন তিনি ২১ বছরের তরুণী। গত ছয় বছরে জীবনের নানা কদর্য রূপ দেখেছেন। যাদের সঙ্গে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি সেই দুই বান্ধবী আমিরা আবাসি ও খাদিজা সুলতানার মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছেন।

২০১৫ সালে যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় যাওয়ার সময় বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে ১৫ বছরের শামীমা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

জঙ্গিদের পরাজয় আর ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের স্বঘোষিত খেলাফতের পতনের পর থেকেই দেশে ফেরার অনুমতি চাইছিলেন শামীমা।

২০১৯ সালে প্রথম সিরিয়ার এক আশ্রয়কেন্দ্রে শামীমার খোঁজ পান দ্য টাইমসের এক সাংবাদিক। আইএসের বর্বরতার মধ্যে থেকেও জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হওয়ার জন্য কোনো অনুতাপ নেই বলে জানিয়েছিলেন ১৯ বছরের শামীমা।

সে বছরই জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সে সিদ্ধান্ত বহাল রেখে শামীমার দেশে ফেরার সুযোগ পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালতও।

এখন শামীমার দাবি, শরণার্থী শিবিরে তার সঙ্গে থাকা অন্য নারীদের ভয়ে সিরিয়া থেকে দেয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে আইএসে যোগদান সিদ্ধান্তের সাফাই গেয়েছিলেন তিনি। তার শঙ্কা ছিল, তাকে ও সে সময় তার গর্ভে থাকা সন্তানকে মেরে ফেলতে পারে আইএসের মতাদর্শ ধারণ করা অন্য নারীরা।

তথ্যচিত্রে শামীমা বলেছেন, ‘কেন আমি দেশ ছেড়েছিলাম এবং বর্তমানে আমি কেমন মানুষ- এ দুটি বিষয় উদার মনে বিবেচনা করতে ব্রিটিশ জনগণকে অনুরোধ করছি আমি। সরকারের কাছে আমার আবেদন, দয়া করে আমাকে আমার বাড়িতে ফেরার সুযোগ করে দিন।'

ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে শামীমার অভিযোগ, তার দেশে ফেরা ঠেকাতে বানোয়াট তথ্য প্রচার করেছে লন্ডন। তিনি আইএসের আদর্শ ও নীতিগত ভাবমূর্তি রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন বলে লন্ডনের অভিযোগ সত্য নয় বলেও দাবি তার।

শামীমা বলেন, ‘আমি মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন হতে চেয়েছিলাম। বন্ধুদের ধর্মচর্চা আমাকে আগ্রহী করে তুলেছিল। কিন্তু ১৫ বছর বয়সের একটা মেয়ে ধর্মীয় শিক্ষা নিলেও সঠিক উপলব্ধি তার হয় না। আর আমি তো আরবি ভাষাও জানতাম না। কাজেই জেনেশুনে এসব করেছি আমি- এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমার দেশে ফেরা ঠেকাতে আমাদের সরকার মরিয়া। যেহেতু আমার কোনো খারাপ কাজে জড়িত থাকার ইতিহাস নেই, তাই আমাকে খারাপভাবে উপস্থাপন করতে এসব অভিযোগ বানানো হয়েছে।’

সিরিয়ায় যুদ্ধ চলাকালীন ২০১৭ সালের এক বোমা হামলায় শামীমার গর্ভজাত দুই সন্তানের মৃত্যু হয়। পরে শরণার্থী শিবিরে প্রতিকূল পরিবেশে প্রাণ যায় আরেক সন্তানের। তাদের কথা বলতে গিয়ে তথ্যচিত্রে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে শামীমাকে।

তিনি বলেন, প্রথমবার মা হয়েছিলেন যেদিন, মেয়েকে দেখে সেদিন জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছিলেন। যুদ্ধে শিশুসন্তানদের মধ্যে প্রথমে হারিয়েছেন ছেলেকে। শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। মেয়ে আর পেটের আরেক সন্তানকে বাঁচানোর তাড়নায় কাঁদতেও পারেননি সেদিন।

তখন থেকেই আইএসের হাত থেকে পালাতে চাইলেও ধরা পড়লে নির্যাতনের ভয়ে সে চেষ্টা থেকে বিরত থেকেছেন শামীমা।

তথ্যচিত্রের জন্য এক ব্রিটিশ সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার সন্তানদের বাবা এখনও জীবিত। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেড ক্রসের সহযোগিতায় নিজের জন্মদিনে স্বামীর কাছ থেকে শুভেচ্ছাবার্তাও পেয়েছেন তিনি।

ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এই তরুণী জানিয়েছেন, আইএসে যোগ দেয়ার পর বিয়ের আগ পর্যন্ত জঙ্গিদের একটি নারীকেন্দ্রে থাকতেন তিনি। সেখান থেকে বিয়ের জন্য তাকে বেছে নেয় তার স্বামী।

‘দ্য রিটার্ন: লাইফ আফটার আইসিস’ শীর্ষক ৯০ মিনিটের তথ্যচিত্রে শামীমা জানান, দেশে ফিরতে পারলে শুরুতেই পছন্দের মস্ত বড় ‘মিটবল সাবওয়ে’ খেতে চান।

তিনি বলেন, ‘আইএসের অপরাধের জন্য আমাকে দায়ী করাটা ভুল। আমি ছোট ছিলাম, সরল ছিলাম। তখন যা বিশ্বাস করেছিলাম, এখন আর সেসব বিশ্বাস করি না। মানুষ ভাবে যে আমি আইএসের সব অপরাধ জেনেশুনে জঙ্গিদের সাথে যুক্ত হয়েছি, তাদের সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু এটা ঠিক নয়। তারা যা করেছে, সেসব জানলে আমি কখনোই তাদের সমর্থন দিতাম না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন ছোট ছিলাম, ভাবতাম আমি সব বুঝি। আমিই ঠিক। এখন জানি যে কতখানি ভুল ছিলাম। তখন আমার মাকে আমি ঘৃণা করতাম। এখন বুঝি যে তার কাছেই আমি সবচেয়ে নিরাপদ ছিলাম, তিনিই আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন, আর এখন আমিও তাকে ভালোবাসি।’

শামীমাকে নির্মিত এ তথ্যচিত্রটি চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে সাউথ বাই সাউথওয়েস্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথম প্রদর্শিত হয়। বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব এটি।

রক্ষণশীল পোশাক ছেড়ে পশ্চিমা জীবনচর্চায় ফেরা এখনকার শামীমা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

দুই বছরেরও বেশি সময় আগে নির্মিত তথ্যচিত্রটিতে শামীমাকে রক্ষণশীল মুসলিম পোশাকেই দেখা গেছে।

তবে সবশেষ ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, রোদচশমা পরা এখনকার শামীমাকে। জানা গেছে, পর্দা, বোরকা, হিজাব, নেকাব ছেড়ে পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক ধরেছেন তিনি। দেশ ছাড়ার আগে যেমন ছিলেন, ফিরে গেছেন সেই জীবনচর্চায়।

আইএসে যোগ দেয়া বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের অনেক নারীর জন্যই নিজ নিজ দেশে ফেরার পথ আটকে গেছে শামীমার মতোই। তাদের নিয়ে শরণার্থী শিবিরে পরিচালিত কর্মশালায় শামীমার একটি ভিডিও ফুটেজও রয়েছে তথ্যচিত্রে।

স্কাই টিভির অর্থায়নে নির্মিত তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন স্প্যানিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা আলবা সোতোররা ক্লুয়া। এতে আরও দেখানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া হুদা মুথানা ও কানাডার কিমবার্লি পোলম্যানকে।

এ বিভাগের আরো খবর