মিয়ানমারে সামরিক শাসনের পতন ও নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে দেড় মাস ধরে চলমান আন্দোলনে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন ছিল রোববার। ওই দিন দেশজুড়ে বিক্ষোভের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ৩৮ বিক্ষোভকারী নিহত হন।
একই দিনে দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে চীনের স্থাপনায় হামলা চালান বিক্ষোভকারীরা। সে সময় চীনের দুটি কারখানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) বরাতে আল জাজিরা ও বিবিসি এসব তথ্য জানিয়েছে।
এএপিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত ১২৫ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
দেশটিতে শনিবার পর্যন্ত ২ হাজার ১৫০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
কারখানায় আগুন
ইয়াঙ্গুনের শিল্প এলাকা হ্লাইংথায়ায় রোববার চীনের দুইটি কারখানা জ্বালিয়ে দেয়া হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ছুড়লে অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হন। আহত হন ২০ জনের বেশি মানুষ। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে এএপিপি।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে এক চিকিৎসক জানান, প্রায় ৫০ জনের মতো আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি।
মিয়ানমারে চীনের দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, হামলাকারীরা হ্লাইংথায়ার কারখানা লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দেন। ওই সময় কারখানার ভেতরে থাকা চীনের কর্মকর্তারা আটকা পড়েন। হামলার সময় তাদের কয়েকজন আহতও হন।
বিক্ষোভকারীরা চীনের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারেন, এ বিষয়ে নিরাপত্তা চেয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলেছিল চীন।
সতর্কতার অংশ হিসেবে শিল্প এলাকা হ্লাইংথায়া ও পার্শ্ববর্তী শ্বেপিথা এলাকায় মার্শাল ল’ জারি করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
হামলার বিষয়ে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইয়াঙ্গুনে লোহার রড ও কুড়াল হাতে একদল ব্যক্তি কারখানায় হামলা চালায়। ওই সময় তারা পেট্রল দিয়ে কারখানায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। কারখানা দুটির পাশাপাশি চীনের ১০টি স্থাপনাও ভাঙচুর করা হয়, যেগুলোর বেশির ভাগই পোশাক কারখানা বা গুদামঘর। চীনের একটি হোটেলেও হামলা চালানো হয়।
সহিংসতা বন্ধে চীনের আহ্বান
এদিকে সহিংসতা বন্ধে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীনের দূতাবাস।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইন অনুযায়ী হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারে থাকা চীনের প্রতিষ্ঠান এবং এতে কর্মরত চীনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান-পরবর্তী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে আসছে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা। সেনাশাসকদের ওপর নানা ধরনের অবরোধও আরোপ করে কয়েকটি দেশ।
কিন্তু মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিষয়ে তাদের প্রতিবেশী দেশ চীনের উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেই। এ কারণে দেশটিতে চীনবিরোধী মনোভাব দিন দিন বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারে বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করা সেনাবাহিনীকে চীন সমর্থন দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিক্ষোভকারীরা।