ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির সাবেক অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী যশবন্ত সিনহা।
একই সময়ে তৃণমূলের সংসদ সদস্য শিশির অধিকারির বিজেপিতে যোগদান করা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
ভারতের পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে দলবদল তুঙ্গে। বামপন্থি থেকে ডানপন্থি সবার মধ্যেই দেখা গেছে দলবদলের প্রবণতা। তবে পশ্চিমবঙ্গে এবার দলবদল মারাত্মক চেহারা নিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এক দলের নেতা যোগ দিচ্ছেন অন্য দলে।
দলবদলের সবচেয়ে বড় চমকটি এসেছে শনিবার। এদিন বিহারের বর্ষীয়ান নেতা ও ভারতে অটল বিহারি বাজপেয়ির সময়ের অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী যশবন্ত সিনহা যোগ দেন তৃণমূলে।
যশবন্তের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বনিবনা হচ্ছিল না বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের। বিভিন্ন বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে মমতার প্রতিবাদী কর্মসূচিতেও দেখা গেছে তাকে। তবে এবার সরাসরি তৃণমূল নেতা হিসেবেই নাম লিখিয়েছেন তিনি।
কলকাতার তৃণমূল ভবনে দুপুরে ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুদীপ ব্যানার্জি ও সুব্রত মুখার্জির মতো নেতাদের উপস্থিতিতে দলের সদস্যপদ গ্রহণ করেন যশবন্ত সিনহা।
এরপরই বলেন, ‘নজিরবিহীন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। একটি দেশের গণতন্ত্রের শক্তি নির্ভর করে যেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর, বিচার বিভাগসহ সেসব প্রতিষ্ঠান আজ দুর্বল।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি তুলে ধরেন দিল্লিতে চলমান কৃষক আন্দোলন এবং চীনের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতির কথা। এসময় প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ির সরকার এবং নরেন্দ্র মোদির বর্তমান সরকারের তুলনাও করেন তিনি।
‘কুকর্ম বন্ধের কেউ নেই’
সংবাদ সম্মেলনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করে যশবন্ত বলেন, ‘এ সরকারের কুকর্ম বন্ধ করার মতো কেউ নেই। অটল বিহারি বাজপেয়ির সময় দলে সবার মতের ওপর গুরুত্ব দেয়া হতো। আর এখনকার সরকার কেবল সবাইকে চুপ করিয়ে কর্তৃত্ব আরোপ করতে জানে।’
যশবন্তকে দলে পেয়ে উচ্ছ্বসিত পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ও প্রবীণ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখার্জি। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের পথপ্রদর্শক হিসেবে থাকবেন যশবন্ত। তার জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার পাশাপাশি তার বিনম্র আচরণও আমাদের ভালো লাগে।’
২০১৮ সালে বিজেপি ছাড়েন ৮৩ বছর বয়সী যশবন্ত। তারও আগে থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদির কট্টর সমালোচক তিনি।
শিশিরকে নিতে বিজেপির তোড়জোড়
তৃণমূলের চমকের দিনে নেতাদের দলে পেতে বসে নেই বিজেপিও। পাল্টা আঘাত দিতে প্রস্তুত হচ্ছে দলটি।
শনিবারই সাবেক অভিনেত্রী ও বিজেপি দলীয় বিধানসভা সদস্য লকেট চট্টোপাধ্যায় ছুটে যান তৃণমূল আইনপ্রণেতা শিশির অধিকারির বাড়িতে। যদিও তাদের মধ্যে আলাপের বিষয়বস্তু জানা যায়নি।
শিশির অধিকারি অনেক দিন ধরেই তৃণমূলের বিষয়ে তার অসন্তোষ জানিয়ে আসছেন। তার ছেলে শুভেন্দু অধিকারি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মমতার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী। আগামী ১৮ মার্চ তার হয়ে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এই সময়ে শিশির অধিকারিকে নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। ছেলের মতো তিনিও যোগ দিতে পারেন বিজেপি শিবিরে। কিন্তু শিশিরের দলত্যাগের সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল।
একই পরিস্থিতি অসমেও। যদিও এ রাজ্যে যুদ্ধ কংগ্রেস বনাম বিজেপির।
অসমের একাধিক কংগ্রেস নেতা এবার বিজেপির হয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। আবার কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বিজেপির একসময়ের মন্ত্রীরা।
দল ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও লড়ছেন অনেক নেতা।