সারা বিশ্বে যমজ শিশু জন্মের হার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন সবচেয়ে বেশি। সাম্প্রতিককালে প্রতি বছর ১৬ লাখ যমজ শিশু দেখছে পৃথিবীর আলো।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী হিউম্যান রিপ্রোডাকশনে শুক্রবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, বর্তমানে জন্ম নেয়া প্রতি ৪০ মানবশিশুর এক যমজ।
প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্রিস্টিয়ান মনডেন জানান, বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী যেকোনো সময়ের চেয়ে তুলনামূলক এবং সুনির্দিষ্টভাবে যমজ শিশুর জন্মহার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি।
গবেষকরা বলছেন, প্রাকৃতিক উপায়ে প্রজননের চেয়ে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞাননির্ভর প্রজনন বেড়ে চলার বড় ভূমিকা রয়েছে এর পেছনে।
বলা হচ্ছে, মাতৃগর্ভে একের অধিক ভ্রূণ তৈরির ঘটনা বেড়ে চলার পেছনে কাজ করছে বেশ কয়েকটি কারণ। যেমন জন্মবিরতিকরণ ওষুধের ব্যবহার বেড়ে চলা, অধিক বয়সে সন্তান নেয়া ইত্যাদি।
তবে সবচেয়ে বড় কারণটি হলো- কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি (এআরটি)।
দি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭০-এর দশক থেকে উন্নত দেশগুলোতে বাড়ছে এআরটির সাহায্যে গর্ভধারণের প্রবণতা। ইদানীংকালে নারীরা বেশি বয়সে সন্তান নিতে আগ্রহী বলে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃত্রিম এ পদ্ধতিটির। একই কারণে বাড়ছে জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতির প্রয়োগও।
গবেষণার জন্য ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৩৫টি দেশের তথ্য সংগ্রহ করেছেন গবেষকরা। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অঞ্চলের হিসাবে যমজ শিশুর জন্মহার সবচেয়ে বেশি আফ্রিকা মহাদেশে। এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের সাথে আফ্রিকার মানুষের জিনগত পার্থক্যকে।
দরিদ্র দেশগুলোতে যমজ শিশুর জন্মহারের ঊর্ধ্বগতি উদ্বেগজনক বলে মত গবেষকদের। মনডেন বলেন, ‘নবজাতক ও শিশুমৃত্যুহার বেড়ে চলার সাথে যমজ শিশু জন্মের সম্পৃক্ততা আছে। বিশেষ করে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সময়ে নানা রকম স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি থাকে মা ও শিশুর।’
প্রতিবেদনটির আরেক লেখক জেরোয়েন স্মিটস জানান, স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে যমজ শিশুর প্রতি বাড়তি যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে জন্ম নেয়া বেশির ভাগ যমজ শিশুর অন্তত একজনের মৃত্যু হয় জন্মের এক বছরের মধ্যেই।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক গবেষণায় প্রতি বছর এমন দুই থেকে তিন লাখ শিশুমৃত্যুর তথ্য পেয়েছিলাম আমরা।’
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, এ সময়ে জন্ম নেয়া বেশির ভাগ যমজই ‘ফ্রেটারনাল টুইনস’। অর্থাৎ দুটি পৃথক নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে জন্ম নেয়া যমজ এখনকার অধিকাংশ শিশু।
অন্যদিকে ‘আইডেন্টিকাল টুইনস’ বা একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু বিভক্ত হয়ে দুটি পৃথক ভ্রূণ থেকে যমজ শিশুর জন্মহার আগের মতোই আছে।