বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন তাদের জীবনকালে কখনও না কখনও শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হন। বর্তমানে এ সংখ্যা ৭৩ কোটি ৬০ লাখ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক নতুন সমীক্ষায় এ কথা বলা হয়েছে। মঙ্গলবার এ সমীক্ষা প্রকাশিত হয়।
এতে বলা হয়েছে, নারীর ওপর এই সহিংসতা তাদের অল্প বয়স থেকেই শুরু হয়। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সের মধ্যে চার নারীর মধ্যে একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা নিপীড়িত এবং যৌন হেনস্তার শিকার হন
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে হয়রানি বা সহিংসতার শিকার হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে। ১৪ কোটি ১০ লাখ নারী বলেছেন তাদের এ অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে ৬ শতাংশ নারী বলেছেন যে তাদের স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছাড়াও তারা অন্য কারও দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে এত বৃহৎ পরিসরে সমীক্ষা এর আগে হয়নি। ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৬১ দেশের ওপর চালানো বিভিন্ন জরিপের ভিত্তিতে এই গবেষণা করা হয়। গবেষণায় কোভিড-১৯ মহামারির তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
বিবিসির খবরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই সমীক্ষার বরাতে জানানো হয়, ফিজি, দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার সাবসাহারা অঞ্চলের মতো স্বল্প আয়ের অঞ্চলে বসবাসকারী নারীরা অনেক বেশি নিপীড়নের ঝুঁকিতে থাকে।
সমীক্ষায় এটাও দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে নারীরা নিজের পরিবারের মধ্যেই নির্যাতিত এবং নিপীড়িত হন। কিন্তু এসব ঘটনা বাইরে বেরিয়ে আসে না। কর্মস্থলেও যৌন হেনস্তার পরিসংখ্যানটা প্রতিবছর বাড়ছে। যদিও এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে নারীরা বিষয়গুলো প্রকাশ্যে নিয়ে আসছেন। যারা দোষী তাদের শাস্তির দাবিও তুলছেন।
কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় এই প্রবণতা এখনো অনেক কম। যদিও নির্যাতনের সংখ্যা গ্রামীণ এলাকাতেই বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত এই সমীক্ষায় এমন অস্বস্তিকর তথ্য বেরিয়ে আসায় যথেষ্ট চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছে সচেতন মহল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, প্রতিটি দেশ ও সংস্কৃতিতে নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। সহিংসতার শিকার হয়ে লাখ লাখ নারী ও তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা আছে, কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের কোনো টিকা নেই।
গেব্রেয়াসুস আরও বলেন, ‘নারীদের উন্নতির জন্য সামাজিক ও প্রশাসনিক সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর ও পারস্পরিক সম্মানজনক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য তৃণমূল স্তর থেকে লড়াই করতে হবে আমাদের।’