ভারতের স্বাধীনতা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। তবে এই সংকোচন দেশের সার্বভৌমত্বের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। যে স্বাধীনতা সংকোচনের কথা বলা হচ্ছে তা হলো ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘ফ্রিডম হাউসের’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২১ ডেমোক্রেসি আন্ডার সিজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে বুধবার।
সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন ‘ফ্রিডম অফ দ্য ওয়ার্ল্ড-২০২১’ এ বলা হয়েছে, ‘২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ক্ষয় হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের স্বাধীনতা’।
এই প্রতিবেদনে ভারতে মুসলিমদের উপর ‘ভিন্ন দৃষ্টি’, ‘হামলা’, ‘রাষ্ট্রদ্রোহ আইন’, লকডাউন ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আর্থিক সাহায্যে ১৯৪১ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে গবেষণামূলক কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ‘ফ্রিডম হাউস’।
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে স্বাধীনতা ক্রমশ আংশিক স্বাধীনতায় পরিণত হচ্ছে। অর্থাৎ নাগরিক অধিকার একেবারে মুক্ত নয় বরং আংশিক মুক্ত।
ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে বিশ্বের উদারবাদী দেশের বিচারে ১০০ এর মধ্যে ভারত পেয়েছে ৬৭। আগে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৭১।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ওপর চাপ তৈরি করছে। শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের ভয় দেখানো হচ্ছে। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই পতন জোরদার হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া বেশ কিছু মৌলিক অধিকার লঙ্ঘণ করেছে।’
প্রতিবেদনে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের সময়ে মুসলিমদের ওপর সহিংসতা ও বৈষম্যমূলক নীতি, নাগরিক সমাজের মত প্রকাশের অধিকার খর্ব হওয়ার মতো বিষয় তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তার মিত্ররা সমালোচকদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে গেছে। মহামারির সময় পরিকল্পনা ছাড়া লকডাউন ঘোষণায় বহু মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। ভারতকে স্বৈরাচারবাদের দিকে চালিত করছে মোদি সরকার।’
দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের কোনো উন্নতি হয়নি। ২০২০ সালে রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতা যেমন ছিল, এ বছরও সেই অবস্থার বদল ঘটেনি।
১৯৫ দেশ ও ১৫টি অঞ্চলের ওপর তৈরি প্রতিবেদনে মুক্ত, আংশিক মুক্ত, মুক্ত নয়- এই তিন ক্যাটাগরিতে স্কোর দেওয়া হয়েছে।
মুক্ত ক্যাটাগরিতে আছে ৮২টি দেশ, আংশিক মুক্ত ক্যাটাগরিতে ৫৯ এবং মুক্ত নয় ক্যাটাগরিতে ৫৪টি দেশ রয়েছে। বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে ভারতের সঙ্গে একই ক্যাটাগরিতে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির প্রথম ১২টি দেশের তালিকায় রয়েছে সিরিয়া, ইরিত্রিয়া (পূর্ব আফ্রিকার একটি ছোট দেশ), দক্ষিণ সুদান, তুর্কমেনিস্তান, উত্তর কোরিয়া, গায়েনা, সৌদি আরব, সোমালিয়া, তাজিকিস্তান, মধ্য আফ্রিকা রিপাবলিক, চীন ও লিবিয়া।
সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতি ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেনের মত দেশগুলিতে, যারা পুরো একশো পয়েন্ট পেয়েছে।
নাগরিক অধিকার বা মানবাধিকারের প্রশ্নে আরও একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে ভারতের করুণ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। ‘এক্সেস নাউ’ একটি অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংস্থা, যারা বিশ্বজুড়ে মানুষের ডিজিটাল অধিকারকে রক্ষা এবং প্রসারিত করার জন্য কাজ করে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এই সংস্থার ‘কিপ ইট অন’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী গোটা দুনিয়ায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার ১৫৫টি ঘটনার ১০৯টিই ঘটেছে ভারতে।
যা বিশ্বে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের প্রায় ৭০ শতাংশ। ফলে এ ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ভারত। ২০২০ সালের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
ভারতে ১৯৯৯-২০২০ সাল পর্যন্ত, বিশ বছরে জম্মু কাশ্মীরে ইন্টারনেট পরিষেবা বহুদিন বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়েছে বেশী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বিশ্বে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের ঘটনা ছিল ১৯৬টি, ২০১৯ এ ২১৩ এবং ২০২০ সালে ১৫৫টি।
গত বছর ভারতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের ১০৯টি ঘটনার পরে দ্বিতীয় স্থানে ইয়েমেন ও তৃতীয় স্থানে ইথিওপিয়া।
‘এক্সেস নাউ’ পরিষেবা বন্ধের কারণ এবং নির্দেশ প্রয়োগের পদ্ধতি নিয়েও সমালোচনা করেছে।