মিয়ানমারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-মিছিলে পুলিশের ছোঁড়া গুলি ও টিয়ার গ্যাসে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন, আহত আরও অনেকে।
রোববার ইয়াঙ্গুন, দায়ুই ও মানদালায় বিক্ষোভে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
১০ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছেন দেশটির অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ইয়াঙ্গুনের হ্লেডান শহরে গুলিবিদ্ধ এক যুবককে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সেই চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। সেখানে গুলিবিদ্ধ আরো দুই জনের অবস্থা গুরুতর।
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়ুতে একটি বিক্ষোভে প্রতিবাদকারীদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে অন্তত: চারজন নিহত হয়।
মানদালয় শহরের একটি বড় মিছিলে গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এছাড়া, লাচিউ শহরে বিক্ষোভে গুলি চালায় পুলিশ।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাণহানির সংখ্যাটি ২০ জন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই রাস্তায় বিক্ষোভ করে যাচ্ছে দেশটির সর্বস্তরের জনগণ। তাদের ওপর চলছে জান্তা সরকারের দমন পীড়নও।
গত শনিবার রাজধানী নেপিদোসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ তীব্র রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে চলে ব্যাপক ধরপাকড়। আটক করা হয় বার্তা সংস্থা এপির এক আলোকচিত্রীসহ কমপক্ষে তিন সংবাদকর্মীকে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, মনিয়া শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন এক নারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি ছড়িয়ে পড়লেও পরিচয় বা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি।
এ দিন ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও স্টান গ্রেনেড ছোঁড়ে পুলিশ। এ সময় অনেক জায়গায় ব্যারিকেড দিয়ে লুকোনোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, অনেক বিক্ষোভকারীকে বেধড়ক পিটিয়েছে সাদা পোশাকের নিরাপত্তা কর্মীরা; ছুড়েছে ফাঁকা গুলি। একই পরিস্থিতি ছিল ম্যান্ডেলে শহরে।
পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স জানিয়েছে, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে ৭৭০ জনের বেশি মানুষকে আটক করেছে মিয়ানমারের পুলিশ। অনেককে সাজাও দেয়া হয়েছে।
সংঘর্ষে প্রাণ গেছে কমপক্ষে তিন বিক্ষোভকারী এবং এক পুলিশ সদস্যের।
১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত ও আটক করে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। তখন থেকেই গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে দেশজুড়ে চলছে বিক্ষোভ।