নির্বাচিত সরকার হটিয়ে ক্ষমতা দখল করা মিয়ানমারের সেনাশাসকদের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য ও কানাডা।
এই নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের তিনটি দেশ মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিল। গত সপ্তাহে অবরোধ আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
অং সান সু চিসহ ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির কয়েক শ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ক্ষমতায় বসে সেনাবাহিনী। শুরু থেকেই এই সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে আসছে পশ্চিমা অনেক দেশ।
গত ১৩ দিন সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের জনগণ। জনগণের চলমান অসহযোগ আন্দোলন দমাতে আটক, গ্রেপ্তার এমনকি কারাদণ্ড দেয়া অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমারের সেনাশাসন।
অবরোধ নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মিয়ানমারের তিন জেনারেলের সম্পদ জব্দ ও ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে কানাডা।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক র্যাব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মিত্র দেশের পাশাপাশি আমরাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় আনব।’
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানসহ জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আগে থেকেই যুক্তরাজ্যের অবরোধের মুখে ছিলেন মিয়ানমারের সামরিক নেতা মিন অং হ্লাইং।
যুক্তরাজ্য ও কানাডার নতুন অবরোধের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি মিয়ানমারের সেনা সরকার। তবে মঙ্গলবার দেশটির সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বিভিন্ন দেশের অবরোধ অপ্রত্যাশিত নয়।
প্রায় অর্ধশতাব্দী সময় ধরে চলা সামরিক শাসন থেকে ২০১১ সালে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে মিয়ানমার। কিন্তু সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থান দেশটিকে আবার বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা অনেকের। যদিও সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া হবে বলে বারবার জনগণকে আশ্বস্ত করে যাচ্ছেন মিয়ানমারের জেনারেলরা।
মিয়ানমার বিষয়ে বৃহস্পতিবার জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোসিমিতসু মতেগি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। তারা মনে করেন, মিয়ানমারকে দ্রুতই গণতন্ত্রের পথে ফিরতে হবে। আমিও তাদের সঙ্গে একমত।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানান, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ক্ষমতায় ফেরানো ও গণতান্ত্রিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের অগ্রাধিকারকে শক্তিশালী করার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপে নতি স্বীকার মিয়ানমারের জেনারেলদের ইতিহাসে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না।
প্রতিবেশী দেশ চীন ও রশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর। মিয়ানমারের এবারের সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায়ও চুপ থাকছে তাদের বন্ধু দেশ দুটি।