মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে নিজ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে সম্পাদকীয় ছাপিয়েছে পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ডন। তাদের দাবি, উন্নয়নশীল আরও অনেক দেশের চিত্র একই রকম।
অং সান সু চিসহ মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটি পার্টির (এনএলডি) অন্তত ৪৫ জন শীর্ষ সারির নেতাকে সোমবার গ্রেপ্তার করে দেশটির ক্ষমতা দখল করেছে সেনা।
গত নভেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই এনএলডি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। এর জেরে মিয়ানমারে আবার সামরিক অভ্যুত্থান হতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়ে আসছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
সোমবার ভোরে ক্ষমতাসীন এনএলডির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের পর রাজধানী নেপিদোসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ।
৪৯ বছর পর সামরিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার এক দশক পার না হতেই আবার সেনাশাসন চেপে বসল মিয়ানমারের ঘাড়ে। দেশটিতে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে চলেছে গণতন্ত্রের চর্চা।
ডন লিখেছে, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে মিয়ানমার যে পরিস্থিতির মুখে পড়েছে, তা পাকিস্তানসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের পরিচিত চিত্র, যেখানে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রায়ই অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপ দ্বারা ব্যাহত হয়; রাজনৈতিক অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করে।’
পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ডনের এই মন্তব্য সত্যই বটে। মিয়ানমারের মতো পাকিস্তানও গণতান্ত্রিক চর্চা খুব দৃঢ় নয়। দেশটির শাসনভার বেশির ভাগ সময়েই ছিল সেনাদের হাতে। আজ পর্যন্ত নির্বাচিত কোনো সরকার মেয়াদ শেষ করতে পারেনি।
বর্তমান ইমরান খানের সরকারও ক্ষমতায় এসেছে সেনাবাহিনীর হাঁটুর ওপর ভর করে। সেনাবাহিনী পালিত সরকারের অভিযোগ তুলে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে একাট্টা হয়ে আন্দোলন করছে পাকিস্তানের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।
গণতন্ত্রপন্থি এনএলডি নেতাদের বন্দি করে ফের মিয়ানমারের ক্ষমতায় বসেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ছবি: এএফপিসম্পাদকীয়তে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের কাণ্ডারি সু চিকে উপযুক্ত নেতা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়নি। উদাহরণ হিসেবে এক্ষেত্রে টেনে আনা হয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু।
বলা হয়েছে, সু চি নিজ দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বছরের পর বছর সংগ্রাম করলেও রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাতে নজর দেননি।
তবে ডন এটাও বলছে যে, রোহিঙ্গা ইস্যু দিয়ে সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে মত দাঁড় করানোটা চুক্তিযুক্ত হয়। দেশটির ক্ষমতা অবশ্যই জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া উচিত।