ভারতে জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) নিয়ে অসমের বাঙালিদের আতঙ্ক কাটছেনা। বরং এনআরসি তালিকা থেকে বাদ যাওয়াদের পাশাপাশি তালিকাভুক্তরাও এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
‘বাংলাদেশি’ খুঁজে বের করতে কোটি কোটি রুপি খরচ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের তত্বাবধানে গত বছরের ৩১ আগস্ট অসমে এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। এতে বাদ পড়েন ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ।
বাদ পড়াদের মধ্যে বেশির ভাগই হিন্দু বাঙালি। এদের মধ্যে অনেক নেপালিও রয়েছেন। বলা হয়েছিল, এনআরসিতে না থাকাদের ফরেনারস ট্রাইব্যুনালে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে।
কিন্তু তালিকা প্রকাশের পর এক বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও কোনো সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি।
এনআরসিতে যাদের নাম ছিল না তাদেরকে বাদ পড়ার কারণও জানানো হয়নি। ফলে তারা আইনি পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব প্রমাণের চেষ্টাও করতে পারছেন না।
ইতোমধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) জানিয়েছে, তারা এনআরসি তালিকা মানবে না। নতুন করে ফের এনআরসি করার কথাও বলছে দেশটি। ফলে এনআরসিতে থাকারাও নিজেদের নাগরিকত্ব নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না।
অসমে বাঙালি মাত্রই আতঙ্কিত। হিন্দুরা আশা করেছিলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাশের ফলে তাদের কোনো অসুবিধা হবেনা। কিন্তু সংসদে তড়িঘড়ি সিএএ পাশ করানো হলেও সেটি এখনও কার্যকর হয়নি।
সিএএতে বলা হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ এর আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও পার্সিরা ধর্মীয় সন্ত্রাসের কারণে শরণার্থী হয়ে এলে ভারতে শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
হিন্দুদের একটি অংশ মনে করেছিলেন সিএএর সাহায্যে তাদের নাগরিকত্ব বাঁচবে। কিন্তু সিএএ বিরোধী আন্দোলনের জেরে এখনও তা কার্যকর করা হয়নি।
কিছুদিন পরেই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অসমেরও বিধানসভা ভোট। দুই জায়গাতেই এনআরসি ও সিএএ বড় ইস্যু হতে যাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কমার কোনো লক্ষণ নেই।
বরং অসমের খসড়া ভোটার তালিকায় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ভোটারের নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে তাদেরও নতুন করে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে।
তাই অসমের বাঙালিরা রয়েছেন চরম আতঙ্কে। হিন্দু বা মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের আতঙ্কের বহর এখন সমান। একই সঙ্গে চলছে বাঙালি বিদ্বেষ।