সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ‘ফেসবুক’-এর ভারত অফিসের নীতি নির্ধারণ বিভাগের প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন আঁখি দাস। গত সপ্তাহে তথ্যের গোপনীয়তা ইস্যুতে প্রায় দুঘণ্টা ধরে আঁখিকে জেরা করেছিল ভারতের সংসদীয় প্যানেল। তারপরই তিনি ইস্তফা দেন।
মঙ্গলবার বিবৃতিতে আঁখির পদত্যাগের কথা জানিয়ে ফেসবুক ইন্ডিয়ার এমডি অজিত মোহন বলেছেন, জনকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতেই ইস্তফা দিয়েছেন আঁখি। গত নয় বছরে ভারতে ফেসবুকের অগ্রগতির পিছনে আঁখির অবদানের উল্লেখ করেছেন অজিত। তবে রাজনৈতিক মহলের খবর, পারিবারিকভাবে বিজেপি ঘনিষ্ঠ আঁখি দাস সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিতে পারেন।
জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কীভাবে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ন্ত্রিত হয়, তা নিয়ে সম্প্রতি কোম্পানির কর্মীদের এবং ভারত সরকারের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন আঁখি নিজে এবং ফেসবুক ইন্ডিয়া। এ নিয়ে সম্ভবত কিছুটা চাপে ছিলেন তিনি, মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
কিছু দিন আগে ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিজেপি নেতাদের উস্কানিমূলক মন্তব্য ছড়ানো ইস্যুতে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় প্যানেলের জেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন অজিত। আঁখিকে তলব করা হলেও তিনি যাননি। দিল্লি বিধানসভার শান্তি এবং সম্প্রীতি কমিটির জেরাতেও উপস্থিত হয়নি ফেসবুক ইন্ডিয়া।
ফেসবুক ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত মোহনের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আঁখি জনসেবার প্রতি আগ্রহী হওয়ার জন্য ফেসবুকে তার ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আঁখি আমাদের প্রথম দিকের কর্মচারী ছিলেন এবং ভারতে কোম্পানির বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি গত দুবছর ধরে আমার নেতৃত্বে একটি দল হিসাবে কাজ করেছেন এবং প্রচুর অবদান রেখেছেন। আমরা সংস্থায় তার অবদানের জন্য কৃতজ্ঞ। তার ভবিষ্যৎ শুভ কামনা।’
ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি শাসনের প্রতি আঁখি দাসের পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী বিতর্ক শুরু হয়েছিল গত আগস্ট মাসে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছিল, ফেসবুক বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা সংক্রান্ত বিধিগুলি সবার ক্ষেত্রে অভিন্নভাবে প্রয়োগ করে না। দিল্লিতে ফেব্রুয়ারির সহিংসতার আগে এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে বিজেপি নেতাদের বক্তৃতার উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছিল।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রাক্তন কর্মচারীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিল, ‘আঁখি দাস সংস্থাটিকে (ফেসবুক) পরামর্শ দিয়েছিল, বিজেপি কর্মীদের দ্বারা এই ধরনের বিধি লঙ্ঘনের শাস্তি দিলে তা ভারতে ফেসবুকের ‘ব্যবসায়িক সম্ভাবনাগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে’।’’
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর আর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন বিজেপির পক্ষে তার (আঁখি দাস) সমর্থন এবং তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিকে অস্বীকার করে তিনি ‘বেশ কয়েক বছর ধরে সংস্থার ভেতরে রাজনৈতিকভাবে পছন্দের ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করেছিলেন।’ এরকম আচরণ দেখে কিছু কর্মী বিশ্বজুড়ে নির্বাচনে নিরপেক্ষ থাকার কোম্পানির প্রতিশ্রুতির সঙ্গে তার (আঁখি দাস) আচরণ পরস্পর বিরোধী বলে মনে করেন।
সোশ্যাল মিডিয়া সরকারের হাতে চালিত হয়েছে বা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে কংগ্রেস দল ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে দুটি চিঠি লিখেছিল।