এখন থেকে গোপন স্যাটেলাইট ও সেন্সর উপাত্ত ভারতের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে আমেরিকা। এসব উপাত্ত ব্যবহার করে নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র ও সৈন্য মোতায়েনের ক্ষেত্রটি আরও নিখুঁত করতে পারবে ভারত।
এ নিয়ে দেশ দুটি ‘বুনিয়াদি বিনিময় ও সহযোগিতা’ (বেসিক এক্সচেঞ্জ ও কোঅপারেশন) সমঝোতায় স্বাক্ষর করেছে মঙ্গলবার। চীনের সঙ্গে গত এপ্রিল মাস থেকে চলতে থাকা সীমান্ত বিরোধের আবহে এরকম একটি সমঝোতা চুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উপস্থিতিতে নয়াদিল্লিতে দুই দেশের আলোচনা চলে। সেখানেই এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বুনিয়াদি বিনিময় ও সহযোগিতা সমঝোতা স্বাক্ষর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সেনা সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই সমঝোতা একটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে দু’তরফেই বেশ কিছু পরিকল্পনা চিহ্নিত করা হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও সুরক্ষার প্রতি আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছি।’
আমেরিকান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও চীনা আগ্রাসন-গালওয়ানের কথা তুলে ধরে বলেন, সীমান্ত নিয়ে সাম্প্রতিক বিবাদের ফলে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি যে চ্যালেঞ্জের সামনে উভয় দেশকে দাঁড় করিয়েছে, সেটাকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা হবে। পম্পেওর কথায়, ‘ভারতের সার্বভৌমত্ব-স্বাধীনতাকে হুমকি দেওয়া হলে আমেরিকা সবসময় ভারতের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত। শুধু চীনা কমিউনিস্ট পার্টি নয়, সাইবার ইস্যু থেকে শুরু করে সব ধরনের বিপদ থেকে বাঁচতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সমঝোতা নতুন দিশা দেখাবে।’
দিল্লিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: এপি
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের খবর, গত ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ানে চীনের সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ‘টু প্লাস টু’ চুক্তির প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে যখন প্রবল টানাপড়েন চলছে, তখন আমেরিকার সঙ্গে দিল্লির এই প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমঝোতা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। পম্পেও, এসপার এবং জয়শঙ্কর, রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্যের পর এই চুক্তি সম্পাদনে দুই দেশের জাতীয় উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে।
কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘বুনিয়াদি বিনিময় ও সহযোগিতা' সমঝোতা আসলে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে রণকৌশলগত সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলা, চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উদার এবং উন্মুক্ত নীতি তৈরি করা। সেখানে বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে প্রতিরোধ করতে চাইছে আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ।পাশাপাশি আর মাত্র ছ'দিন পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতায় স্বাক্ষর ট্রাম্প প্রশাসনের একটি কৌশলী চাল বলেই মনে করছেন অনেকে।