বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বন্দির সঙ্গে প্রেম, কারাগারে বিয়ে

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ২১:৫৪

নবদম্পতি বলছেন, বিয়ের অনুষ্ঠানটি তাদের স্বপ্নের মতো না হলেও তারা খুবই খুশি এবং কৃতজ্ঞ। কারণ, তাদের মতো আরো যেসব প্রেমিক-প্রেমিকা কারাগারে আছেন তাদেরও বিয়ের সুযোগ তৈরি হলো।

৩৮ বছর সাজা পাওয়া এক কারাবন্দিকে বিয়ে করলেন যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ওয়াংশিটন রাজ্যের এক কারাগারে হয় এই বিয়ে।

নবদম্পতি বলছেন, বিয়ের অনুষ্ঠানটি তাদের স্বপ্নের মতো না হলেও তারা খুবই খুশি এবং কৃতজ্ঞ। কারণ, তাদের মতো আরো যেসব প্রেমিক-প্রেমিকা কারাগারে আছেন তাদেরও বিয়ের সুযোগ তৈরি হলো।

ওয়াশিংটন রাজ্যের টাকোমার বাসিন্দা ক্রিস্টোফার ব্ল্যাকওয়েলের দুটি মামলা ৩৮ বছরের সাজা হয়েছে। ২০৪৫ সাল পর্যন্ত জেলেই থাকতে হবে তাকে। ২০০৭ সাল থেকে রাজ্যের মনরো সংশোধনাগারে আছেন তিনি।

সেখানেই ২০১৭ সালে বন্দিদের জন্য আয়োজিত স্বল্পমেয়াদি একটি কোর্সের ক্লাসে তার সঙ্গে দেখা স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের পিএইচডি শিক্ষার্থী চেলসি মুরের। ক্লাসের বিষয় ছিল নাগরিকের মৌলিক অধিকার।  

বন্দিদের ক্লাস নিতে নিতেই ব্ল্যাকওয়েলের সঙ্গে পরিচয় হয় ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ওজাই শহরের বাসিন্দা মুরের। পরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। কোর্সটি শেষ হওয়ার পরও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখেন তারা।

নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মুর জানিয়েছেন, কারাগারের ইমেইল সুবিধা ব্যবহার করে তার সঙ্গে গান, বই, সিনেমা নিয়ে আলাপ করতেন ব্ল্যাকওয়েল। এক পর্যায়ে প্রেমে পড়েন তারা। সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার।

কিন্তু বাদ সাধে আইনি প্রক্রিয়া ও করোনা মহামারি। ‘দীর্ঘ ও জটিল’ এক আইনি পথ পাড়ি দিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারাগারেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন দুজন।

৩২ বছর বয়সী চেলসি মুর জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে বিয়ে করার সিদ্ধান নেন তারা। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা কঠিন হয়ে পড়েছিল। অনেক আইনি প্রক্রিয়ার পর প্রথমে ভার্চুয়ালি বিয়ে করার অনুমতি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

তবে তার একদিন পরই দুজনকে অবাক করে দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, সশরীরে উপস্থিত থেকেই বিয়ে করতে পারবেন তারা। অবশ্য এজন্য বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দেয়া হয়। বলা হয়, শর্ত না মানলে বাতিল করা হবে বিয়ের আয়োজন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ১৮ সেপ্টেম্বর মনরো সংশোধনাগারের দর্শনার্থী কক্ষে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়। করোনা মহামারির কারণে নিজেদের মধ্যে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন পাত্র-পাত্রী। কারা কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকায় পুরো সময়ে একবারের জন্যও কেউ কাউকে স্পর্শ করতে পারেননি। অতিথি বলতে ছিলেন কারাগারের কয়েকজন রক্ষী আর বিয়ের দুজন সাক্ষী।

চেলসি মুর জানিয়েছেন, বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর অনেক দিন তারা দেখা করতে পারেননি। ছয় মাস পর বিয়ের দিনই তারা মুখোমুখি হন। আবার কবে দেখা হবে তাও জানেন না তারা।

৩৯ বছর বয়সী ব্ল্যাকওয়েল টেলিফোনে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তরুণ বয়সের সব অপরাধের কথা জেনেও মুর তাকে বিয়ে করতে রাজি হন। তখনই তিনি নিশ্চিত হন, মুরই সেই মানুষ যার সঙ্গে তিনি জীবন কাটাতে চান।

বিয়ে সামনে রেখে জেলখানায় নিজের হাতে তৈরি জিনিস বিক্রির টাকা দিয়ে মুরের জন্য আংটি কেনেন ব্ল্যাকওয়েল। প্রবেশপথের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে পৌঁছাতে চল্লিশ মিনিট দেরি হয়ে যায় মুরের। একটা লম্বা সাদা বিয়ের গাউন পরে ছিলেন তিনি। ব্ল্যাকওয়েলের পরনে ছিল কারাগার থেকে নির্ধারণ করা দেয়া পোশাক।

কারাগারের একজন যাজক তাদের বিয়ে পড়ান। বিয়ের কাগজপত্রে সই করার পরে কয়েকটি ছবি তোলেন তারা। এরপরই অনুষ্ঠান সমাপ্তি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

বিয়ের সাক্ষী ছিলেন মুরের বন্ধু মেগান রোজ ডোনোভান। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, ‘অনেকটা পরাবাস্তব মুহূর্ত ছিল এই বিয়ে।’

কারাবন্দি ব্ল্যাকওয়েল নিজেকে অনেকটা বদলে নিয়েছেন। জেলে বসেই অর্জন করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিগ্রি। কারা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়েও লেখালেখি করছেন। সেগুলো প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন ব্লগে।

মুরের আগ্রহ কারাবন্দিদের শাস্তির মেয়াদের সংস্কার নিয়ে, বিশেষ করে যারা অল্প বয়সে করা অপরাধের জন্য নানা কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন।

সাক্ষাৎকারে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে মুর বলেন, সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ২৫ বছর বয়সের আগে একজন মানুষের মস্তিষ্ক পুরোপুরি বিকশিত হয় না। অথচ ১৮ বছর পার হলেই একজনকে কঠোর শাস্তি দেয়া হয়। ২৫ বছর বয়সের আগে করা অপরাধে কাউকে যদি দীর্ঘ সাজা দিতেই হয়, তাহলে তার জন্য যেন নিয়মিত প্যারোল সুবিধা থাকে।

এ বিভাগের আরো খবর