রাজশাহীতে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। প্রথম দিকে এখানে যাদের ডেঙ্গু ধরা পড়ছিল তারা মূলত ঢাকায় বেড়াতে গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তবে এখন শনাক্ত হচ্ছে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত রোগীও।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রতিদিনিই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। রোগীর সংকুলান না হওয়ায় বাড়ানো হয়েছে ডেঙ্গু ইউনিটে বেডের সংখ্যা।
রামেক হাসপাতালের তথ্য বলছে, এখানে প্রথম ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ১৪ জুলাই। তবে তারা সবাই ঢাকা ফেরত ছিলেন। বুধবার সকালে দেয়া তথ্যমতে ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৫ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আগে ভর্তি ছিলেন ৫২ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৬ জন।
বর্তমানে হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৫১ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ২২ জন রোগীর বাড়ি রাজশাহীতে। এছাড়া বগুড়া, পাবনা, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডেঙ্গু রোগীও ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ১৮টি থেকে বেড সংখ্যা ৫২তে উন্নীত করা হয়েছে।
চলতি ডেঙ্গু মওসুমে বুধবার পর্যন্ত ১৯৭ জন ডেঙ্গু রোগীকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। আর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১৪৫ জন। তাদের মধ্যে ৪০ জনই রাজশাহীর স্থানীয়। আর বাকিরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতালের একটি বিশেষায়িত টিম কাজ করছে। মজুদ রাখা হয়েছে ওষুধপত্রও। তবে এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনই সচেতন না হলে সামনে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনায় বেগ পেতে হবে।’
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মো. ফারুক বলেন, ‘রাজশাহী জেলায় এখন স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়েও রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
‘এ পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে ৯১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারা উপজেলাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া রামেক হাসপাতালেও রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এখন মশা যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। মশা মারা তো আমাদের কাজ নয়। মশা মারা বাদে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বর্তমানে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে বিশেষ অভিযান চলছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ডেঙ্গু বিষয়ে ক্যাম্পেইন ও সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম চলছে।’
এডিসের লার্ভা পাওয়ায় তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
রাজশাহী মহানগরীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। বুধবার এডিস মশা ও লার্ভা পাওয়ায় তিন প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার বেলা ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়। অভিযান পরিচালনা করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সচিব মো. মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বুধবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজার এলাকা এবং বাসাবাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় এডিস মশা ও মশার লার্ভা পাওয়ায় দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর ২৬৯ ধারায় ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।