বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডেঙ্গু: সংকট দেখিয়ে চড়া দামে স্যালাইন বিক্রির অভিযোগ

  •    
  • ২৩ জুলাই, ২০২৩ ০৯:৪৪

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল আলম বলেন, ‘এভাবে সংকট দেখানোর পেছনে একটা দুষ্ট চক্র কাজ করছে। এরা একটা সিন্ডিকেট তৈরি করছে। ডেটা থেকেই বোঝা যায়, কোনো সংকট নেই।’

ডেঙ্গু নিয়ে রাজধানীর মগবাজারের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী কামরুল হাসানের স্ত্রৗ ও ছেলে। আক্রান্ত দুই রোগীকেই দেয়া হচ্ছে স্যালাইন।

চিকিৎসক ১০ বছর বয়সী ছেলের জন্য ডিএসএন ৫% স্যালাইন আনতে বললে বিপাকে পড়েন বলে জানান কামরুল।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক ফার্মেসি ঘুরে স্যালাইন না পেয়ে শাহবাগে গিয়ে দেখলাম, একই স্যালাইনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক বাবা-মা। ১০০ টাকার স্যালাইন ৩০০ টাকা করে ৬০০ টাকা দিয়ে দুটি স্যালাইন কিনে ফিরলাম।’

এ বিষয়ে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে কথা হয় এক ক্রেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ‘স্যালাইন কোথাও পাই নাই। প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে কোনো ওষুধ চাইলে আরও দুইটা ধরায়া দেয় দোকানদার।

‘একটার পাশাপাশি আরেকটা খেলে নাকি উপকার। সবই বিক্রির ধান্দা।’

ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শ্যামলীর শিশু হাসপাতাল থেকে কয়েকজন জানান, তারা ওষুধের দোকানে গিয়ে স্যালাইন পাচ্ছেন না। একটা-দুইটা মিললেও গুনতে হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ বেশি টাকা। এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমরাও পাচ্ছি না স্যালাইন। হাসপাতালের ফার্মেসিতেও স্যালাইন শেষ।’

ডিএনএস স্যালাইন কী

এ বিষয়ে ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক, শিশু ও কিশোর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ডিএনএস স্যালাইন সোডিয়াম ক্লোরাইড সমৃদ্ধ স্যালাইন, যা হাইপোগ্লাইসেমিয়া রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পুনরুদ্ধার করে। এটি সাধারণত ডেঙ্গু রোগীদের বয়স অনুযায়ী মাত্রা কম-বেশি করে দেয়া হয়।’

দাম নিয়ে যা বলছেন বিক্রেতারা

রাজধানীতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা শুরু হওয়ার পর ডিএনএস স্যালাইনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। আর কোনো কোম্পানি এটি সরবরাহ করতে পারছেন না বলে জানান শাহবাগ মোড়ের আফতাব স্টোর নামের এক ফার্মেসির বিক্রেতা। এ ছাড়া হেরা ফার্মেসি, ভিআইপি ড্রাগ হাউজ, সুপর্ণা ড্রাগল্যান্ডসহ অনেক ফার্মেসি থেকে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দোকানে এ স্যালাইন নেই; সরবরাহ করছে না ওষুধ কোম্পানিগুলো।

শাহবাগ মোড়ের ফার্মেসিগুলো ঘুরে একটিতে ডিএনএস স্যালাইন পাওয়া যায়। এক বিক্রেতার উত্তর, ‘প্রায় দেড় মাস ধরে এ উপাদানের সব স্যালাইনের সরবরাহ বন্ধ। আপনার ভাগ্য ভালো যে একটা পেয়েছেন।’

রাজধানীর শ্যামলীর কয়েকটি ফার্মেসি থেকেও বলা হয়, ওষুধ কোম্পানি স্যালাইন সরবরাহ করছে না।

বিপরীত বক্তব্য ওষুধ কোম্পানির

স্যালাইন সংকট নিয়ে জানতে চাইলে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালসের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কেন স্যালাইন সাপ্লাই বন্ধ রাখব? কোনো পরিস্থিতিতে ওষুধ সাপ্লাই বন্ধ রাখা হয় না; বরং চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়ানো হয়। আমাদের কাছে ওষুধ সাপ্লাই বন্ধ রাখার কোনো তথ্য নেই।’

একমি ফার্মাসিটিউক্যালসের মার্কেটিং অফিসার বলেন, ‘আমাদের গত কয়েক মাস ধরে কাঁচামালের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। এগুলো দেশের বাইরে থেকে আসার পর আমরা তৈরি করি।

‘তারা কাঁচামাল দিতে পারছেন না। তাই সংকট দেখা দিয়েছে, তবে স্যালাইন সরবরাহে আমরা লিডিং কোম্পানি না বলে বরাবরের মতোই সরবরাহ করছি।’

ওষুধ প্রশাসনের ভাষ্য

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে কোনো লিডিং ফার্মাসিটিউক্যালস স্যালাইন বা যেকোনো ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করেনি। এটা তাদের বাজারে টিকে থাকার প্রতিযোগিতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন চাহিদা বেশি থাকে, তখন সেই ওষুধ সাপ্লাই বন্ধ করার তো প্রশ্নই নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সংকট বিক্রেতারা তৈরি করেন। ওষুধ মজুত রেখে তারা কৃত্রিম সংকট দেখান, যেটার প্রমাণ আমরা অনেকবার অভিযানে গিয়ে পেয়েছি।’

তিনি জানান, চাহিদা বাড়ার কারণে প্রতিদিন ওরিয়ন ৩০ হাজার লিটার, অপসোসিন ২৭ হাজার লিটার, বেক্সিমকো, পপুলার তাদের স্বাভাবিক উৎপাদন চালু রেখেছে। এমনকি শুক্রবার বন্ধের দিনেও তারা স্যালাইন উৎপাদন ও সরবরাহ করেছে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল আলম বলেন, ‘এভাবে সংকট দেখানোর পেছনে একটা দুষ্ট চক্র কাজ করছে। এরা একটা সিন্ডিকেট তৈরি করছে। ডেটা থেকেই বোঝা যায়, কোনো সংকট নেই।

‘স্যালাইন সংকটের এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা অভিযানে যাব। অনেক বিক্রেতা গোডাউনে ওষুধ মজুত করেন। সে রকম কিছু পেলে ওষুধ প্রশাসন কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে তাদের সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর