রাজধানী জুড়েই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি অনেক বেশি। এ কারণে নগরীর সবাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টি ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্-বর্ষা জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। মঙ্গলবার মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্য ভবন মিলনায়তনে এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। জরিপের ফল তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কীটতাত্ত্বিক দল ১৭ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালনা করে। ঢাকার দুই সিটির মোট ৯৮টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৪৯টি বাড়িতে জরিপ কার্যক্রম চালানো হয়।
জরিপের তথ্য বলছে, ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা রয়েছে এমন পাত্র এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থলের যে সংখ্যা পাওয়া গেছে তা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
অধ্যাপক ডা. নাজমুল বলেন, ঢাকার ৫৭টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার ২৮টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে।
ডিএনসিসির ৫৪টি ও ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ড মিলে ঢাকার দুই সিটিতে মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ১১৯টি। এর মধ্যে ৯৮টি ওয়ার্ডে জরিপ করা হয়েছে৷ উত্তরের ৪০টি ও দক্ষিণের ৫৮টি ওয়ার্ডে গেছেন জরিপকারীরা। জরিপ মতে, এর মধ্যে ঢাকার অর্ধেকসংখ্যক ওয়ার্ডই রয়েছে ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে।
এসব ওয়ার্ডের চার হাজার ১৪৯টি বাড়িতে গিয়ে জরিপকারীরা দেখেন ৫৪৯টি বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা মিলেছে। এর মধ্যে উত্তরে ২৭২টি এবং দক্ষিণের ২৭৮টি বাড়িতে মিলেছে লার্ভা। এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি।
প্রসঙ্গত, কোনো এলাকায় মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে। জরিপে প্রতি একশ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে এডিস মশার লার্ভা বা পিউপা পাওয়া গেলে সেটাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি’ বলা হয়।
অধিদপ্তর বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২২, ২৩, ২৬, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫৪, ৫৫ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এসব ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকাগুলো হলো- গোরান, মেরাদিয়া, বাসাবো, সবুজবাগ, মুগদা, মাদারটেক, ফকিরাপুল, আরামবাগ, শাহজাহানপুর, রাজারবাগ, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, ধানমণ্ডি, রায়েরবাজার, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফেন্ট রোড, মিণ্টো রোড, কাকরাইল, হাজারীবাগ, লালবাগ, আজিমপুর, পলাশী, বংশাল, সিদ্দিকবাজার, শাঁখারীবাজার, রায় সাহেববাজার, ওয়ারী, সূত্রাপুর, মিল ব্যারাক, সায়েদাবাদ, উত্তর যাত্রাবাড়ী, মীরহাজিরবাগ, দোলাইরপাড়, গেণ্ডারিয়া, জুরাইন ও কামরাঙ্গীরচর।
অপরদিকে উত্তর সিটির ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৩, ৩৫, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকাগুলো হলো- মিরপুর, পল্লবী, মাজার রোড, পীরের বাগ, মনিপুর, শেওড়াপাড়া, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, খিলক্ষেত, কুড়িল, জোয়ার সাহারা, বনানী, গুলশান, বারিধারা, মহাখালী, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, কারওয়ানবাজার, তেজতুরী বাজার, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, বায়তুল আমান, মগবাজার, ইস্কাটন ও বাড্ডা।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, ‘জরিপে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এবার মশার ঘনত্ব ২০১৯-২০ সালের চেয়ে অনেক বেশি। এ বছর দেরিতে বর্ষা এসেছে এবং দেরিতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর ডেঙ্গুর মৌসুমও গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক রাশেদা সুলতানা, আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশারসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।