বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সব করেছি তবুও ওজন কমেনি কেন

  •    
  • ৯ মার্চ, ২০২৩ ১৫:৫২

‘হরমোন মিসফায়ারিং’ থেকে উত্তরণের বেশ কিছু কার্যকর উপায়ের একটা হলো সঠিক নিয়মে শারীরিক ব্যায়াম। ব্যায়াম শরীরের সঙ্গে মনকে যুক্ত করে, যে ছন্দ হারিয়ে যায় বার বার তাকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। যারা আগে কখনও ব্যায়াম করেন নাই তারা হাঁটা শুরু করতে পারেন।

ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। খাবার কমিয়ে দিয়ে কিংবা সামান্য ব্যায়াম করেও ওজন কমছে না বরং আগের অবস্থাতেই আছে।

ওজন বাড়া নিয়ে যারা এমন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ইশরাত জাহান স্বর্ণা। তার ভাষায় সেগুলো তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে।

মদিনা সদ্য বিবাহিতা, আনত সলজ্জ মুখ। মুখে অনেকটা মেদ জমে মুখের স্বাভাবিক আকৃতি কিছুটা পরিবর্তিত। নতুন সংসারে নতুন অতিথি আসবে এমন চাওয়া শ্বশুরবাড়ি, বাবার বাড়ি দুজায়গাতেই। এদিকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, মেয়েটা ভীতসন্ত্রস্ত, মা ছাড়া কাউকে বলতে সাহস পায়না। স্বামী জানলেও এ বিষয়ে মাথা ঘামায়নি। মেয়েটার মা ভাবে, মাসিক মাসে মাসে না হলে সন্তান আসবে কি?

এ ভাবনা থেকেই চিকিৎসকের কাছে আসা। দীর্ঘ ইতিহাস ও পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেখা গেল মেয়েটা প্রায়ই রাত জাগে, ওজন বাড়ছে বিধায় সারাদিন তেমন কিছু খায় না, বিশেষ করে দুধ, ডিম এড়িয়ে চলে, সবজি মুখে রুচে না, সকালে একটা লেবু, মধু ও কুসুম গরম পানি খেয়ে নেয়। ক্ষুধা লাগলে লেক্সাস বিস্কুট। সকালের নাস্তায় পাউরুটি খাওয়া হয় বেশি।

শরীরের মাপ নিয়ে দেখা গেল ওয়েস্ট হিপ রেসিও বেশি, যা নির্দেশ করে ইনসুলিন রেসিসটেন্স অর্থাৎ ইনসুলিন হরমোন শরীরে থাকার পরেও কাজ করতে পারছে না। পরীক্ষায় এলো ভিট ডি লেভেল আশঙ্কাজনকভাবে কম।

মদিনাকে দেয়া হলো খাবার সম্পর্কে ধারণা, ঘুম, পানি ও কায়িকশ্রমের দিকনির্দেশনার সঙ্গে মাইন্ডফুলনেসের চর্চা।

মদিনা নিয়মিত ফলোআপে আসছে এবং ধীরে ধীরে সমস্যাগুলো ঠিক হয়ে আসছে।

আজ তাই একটা নতুন টার্ম, ‘হরমোন মিসফায়ারিং’ বলছি।

ধরুন আপনি খুব উদ্দীপনা নিয়ে ডায়েট এক্সারসাইজ শুরু করলেন, মাস দুয়েক পরে দেখলেন আপনার ওজন দুই কেজি বেড়ে গেছে। অথচ আপনি ক্লিন ইটিং এ ছিলেন, জাঙ্ক ফুড খাননি, সফ্ট ড্রিঙ্কস খাননি, পানি, ঘুম সবই ঠিক ছিল তাহলে হলোটা কী? বা মদিনার মতো নিজের বুদ্ধিতে করেছেন, প্রচণ্ড মানসিক চাপ নিয়েছেন।

হতে পারে স্ট্রেস হরমোনের আধিক্য, ইনসুলিন আর ল্যাপ্টিন রেসিসটেন্স এস্ট্রোজেন বেশি, আবার টেস্টোস্টেরন কম, হরমোন এক্সিসও ঠিকমতো চলছে না। এ রকমটাকে বলে হরমোন মিসফায়ারিং, যা কিনা মেয়েদের ওজন বাড়ার পিছনে মূল কারণ।

স্ট্রেস হরমোন বেশি নাই এমন মেয়ে এ যুগে আছে নাকি, সংসার, চাকুরি, সন্তানের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের ক্রমশ ভাঁজ পড়া ত্বক, পাতলা হয়ে আসা চুল, একাকিত্ব অথবা অনেক বেশি ভিড়, ট্রাফিকের ক্যাকোফোনি।

এর মাঝে ভালোবেসে মানুষে জানতে চায়, ‘এত মুটিয়েছ কেন? খালি বসে বসে খাও?’

‘হরমোন মিসফায়ারিং’ থেকে উত্তরণের বেশ কিছু কার্যকর উপায়ের একটা হলো সঠিক নিয়মে শারীরিক ব্যায়াম। ব্যায়াম শরীরের সঙ্গে মনকে যুক্ত করে, যে ছন্দ হারিয়ে যায় বার বার তাকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। যারা আগে কখনও ব্যায়াম করেন নাই তারা হাঁটা শুরু করতে পারেন।

হাঁটার মাধ্যমে উপকারগুলো পেতে কিছু টিপস

দুই গ্লাস পানি পান করুন হাঁটতে যাওয়ার আগে, ব্ল্যাক কফি খেয়ে গেলে ভালো এনার্জি পাবেন, এ সময় সেরে নিতে পারেন জরুরি ফোনালাপ, হাঁটার সময় হাত একটু ভাঁজ করে সামনে পিছনে নিয়ে হাঁটবেন, স্টেপস কাউন্ট করলে মোটিভেশন পাওয়া যায়। তাই মোবাইল অ্যাপ বা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করতে পারেন, হাঁটার সময় হার্ট রেট অন্তত ১২০ এর ওপরে না ওঠলে বডি ফ্যাট বার্নিং মোডে যাবেনা, হাঁটার শুরুতে ওয়ার্ম আপ এবং শেষে কুলিং ডাউন অবশ্য জরুরি। শীত, কুয়াশা, ঝড়-বৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা যাদের হাঁটার জায়গার অভাব তারা ইউটিউব দেখে পাওয়ার ওয়ার্ক করতে পারেন।

এ পর্যন্ত পড়ে অনেকেই ভাবছেন, ‘আমারতো ওজন ঠিকই আছে, আমি আর হেঁটে কী করবো?’ অথবা ভাবছেন সারাদিন সংসার, অফিস, বাজার মিলিয়ে এতো দৌড়াই আমি, এরপরে আর হাঁটতে হবে কেন? বা হাঁটলেই কি আমার ওজন কমে যাবে?

হাঁটার সময়, সুযোগ, স্থান মেলানো বর্তমানে কর্মজীবী মায়েদের জন্য এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ বটে। তবে যখন আপনি জানতে পারেন শুধু সপ্তাহে পাঁচদিন ত্রিশ মিনিট হেঁটে আপনি আপনার শরীরে বিপ্লব ঘটাতে পারেন, তখন কিন্তু সর্বান্তকরণে হাঁটার সুযোগ খুঁজবেন আপনি।

হাঁটার নানা উপকারিতা রয়েছে।

প্রথমত

হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য। এ এমন এক অঙ্গ যার বিশ্রাম হবে কেবল আপনার মৃত্যু হলে। দেহের প্রতিটা কোণে কোণে যে রক্ত সরবরাহ করে তারও রয়েছে নিজস্ব রক্তের চাহিদা, সেটা সরবরাহ করে থাকে করোনারি ধমনী। বিভিন্ন কারণে এ ধমনীতে ব্লক হতে পারে। তখন রক্ত চলাচল কম বা একেবারে বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এতে বুকে তীব্র ব্যথা যেমন হতে পারে, তেমনি হতে পারে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক।

এটা এড়ানো যায় যদি মূল রাস্তার পাশে বাইপাস রাস্তা থাকে রক্ত চলাচলের জন্য, মেডিক্যালের ভাষায় বলা হয় কোল্যাটারাল ধমনী। সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বাইপাস রাস্তাগুলো প্রাকৃতিক নিয়মে তৈরি হতে থাকে। আর একে বুস্ট করার চমৎকার একটা উপায় আছে তা হলো নিয়মিত হাঁটা। হাঁটলে অল্প বয়স থেকেই কোল্যাটারাল বা বাইপাস রাস্তাগুলো তৈরি হতে থাকে। যদি কোনো ধমনীতে ব্লক হয়েও যায় বাইপাস রাস্তা দিয়ে রক্ত চলাচল অব্যাহত থাকে এবং আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এড়ানো যায়।

দ্বিতীয়ত

আমাদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ এবং প্রতিদিনের বেঁচে থাকার অপরিহার্য ক্ষমতা হলো স্মৃতিশক্তি। যা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। যাকে বলা হয় সিন্যাল অ্যাট্রোফি। মেডিক্যাল সায়েন্স বলে লিভারের মতো ব্রেইন সেলের পুনরায় তৈরি হওয়ার ক্ষমতা (রিজেনারেটিভ ক্যাপাসিটি) নেই। সাইকোলজির বহুল পঠিত টেক্সটবুক গ্যানং- এ বলা আছে হাঁটলে আমাদের ব্রেইন এর অ্যামিগডালা অংশে নিউ ব্রেইন সেল তৈরি হয়, যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সক্ষম। এবার একটু ভাবুন তো ওজন কমানোই কি সবকিছু? মূলকথা হলো সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকা, আত্মনির্ভরশীল থাকা।

তৃতীয়ত

হাঁটলে ইনসুলিন রেসিসটেন্সের উন্নতি হয়। আমাদের শরীরের কোষে ইনসুলিনের সাহায্য ছাড়া গ্লুকোজ প্রবেশ করতে পারে এতে রক্তে চিনির মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আসে। নিয়মিত হাঁটুন। একটু ওয়ার্ম আপ করে নিয়েই এতটা জোরে হাঁটবেন যাতে হাঁটার সময় কথা বলতে কষ্ট হয় আপনার। হাঁটার সময় জিকির করুন, এটা বেস্ট। যদিও অনেকে গান শোনা পছন্দ করে। মনে করে করে নিশ্বাস নিবেন তখন।

সুন্দর রাস্তায় হাঁটলে আপনার প্রতিদিনের জমে থাকা অবসাদ একটু একটু করে ঝরে যাবে। দেখবেন অকারণেই মনটা খুশি খুশি লাগছে। একে বলে মুড এলিভেশন।

চতুর্থত

বাড়তি পাওনা হিসেবে থাকছে কোষ্ঠ পরিষ্কার। হাঁটার সময় শরীরের প্রতিটি জয়েন্ট এর গ্লিডিং মুভমেন্ট হওয়ার কারণে জয়েন্ট ফ্লেক্সিবিলিটি মেইনটেইন হয় যা অস্টিওআর্থারাইটিস নামক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

এ বিভাগের আরো খবর