করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে রংপুরে যাদের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে তাদের প্রায় ৭০ ভাগের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।
করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে অক্সিজেনের প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হবে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
রংপুরের করোনা ডেডিকেটেড ১০০ শয্যার হাসপাতালে এখন রোগী ভর্তি আছে ৯২ জন। ১০ জন আছে আইসিইউতে।
আইসিইউতে বেড খালি না থাকায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে রোগী। হাসপাতালের বাইরে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জানানো হয়েছে আইসিইউতে বেড খালি না থাকার বিষয়টি।
এদিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আছে ২২ জন রোগী। সেখানে এখনও করা হয়নি করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সব রোগীকেই দিতে হচ্ছে অক্সিজেন।
রংপুর মেডিক্যালের অক্সিজেন প্ল্যান্ট ইনচার্জ আবু সাঈদ খান বাবু নিউজবাংলাকে জানান, এখন প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার লিটার অক্সিজেন রোগীদের দিতে হচ্ছে। এই হাসপাতালে যে সেন্ট্রাল প্লান্ট আছে তার ধারণক্ষমতা ১০ হাজার লিটার। এরমধ্যে সব সময় রিজার্ভ রাখতে হয় ২ হাজার ৩০০ লিটার।
তিনি জানান, ৫ জুলাই ৭ হাজার ১৩০ লিটার অক্সিজেন ছিল। এরমধ্যে প্লান্টেই থাকবে ২ হাজার ৩০০ লিটার। বাকি যে অক্সিজেন ছিল তার মধ্যে ২ হাজার ৯৯০ লিটার ব্যবহার হয়েছে; ৫ জুলাই রাত ১টা থেকে ৬ জুলাই বেলা ১১টা পর্যন্ত ১ হাজার ৮৪০ লিটার ব্যবহার হয়েছে।
অক্সিজেন প্ল্যান্ট ইনচার্জ বলেন, ‘প্ল্যান্টে ঠিকমতো অক্সিজেন সরবরাহ না হওয়ায় মাঝে মাঝে সংকটে পড়তে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডাকে জানিয়েছে। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে ও সঠিক সময়ে ঠিকঠাক সরবরাহ না পেলে মুশকিল হয়ে যাবে।’
গত ২ জুলাই ভোরে রংপুর করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতালে ২ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ ছিল। অক্সিজেন না পেয়ে দুজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ করেন স্বজনরা।
রংপুরের করোনা ডেডিকেটেড ১০০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি আছেন সদর উপজেলার সদ্যপুস্করনি গ্রামের মৌনতা।
মৌনতার ভাই মো. মামুন জানান, তার বোন চারদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। সবসময় অক্সিজেন দিয়ে রাখতে হচ্ছে। যখন বাড়িতে ছিল তখনও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। হাসপাতালে অক্সিজেন দেয়ার পর এখন অবস্থা অনেকটা ভালো।
নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের একেএম সুমন জানান, তিনি তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। শ্বাস নিতে পারছিলেন না। পরে তার সহকর্মীকে জানালে তিনি দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যান। রংপুর মেডিক্যালে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৫০ এর নিচে ছিল। ঠিক সময়ে অক্সিজেন না পেলে বাঁচতেন কি না জানেন না।
জেলা সিভিল সার্জন হিড়ম্ব কুমার জানান, হাসপাতালে যেসব রোগী আসছেন তাদের প্রায় ৭০ ভাগকেই অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। সংক্রমণ যদি আরও বাড়ে তাহলে অক্সিজেন সংকট তৈরি হবে। আরও দুটি ট্যাংকে দ্রুত অক্সিজেন রিজার্ভ প্রয়োজন।
রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের ৫৮টি উপজেলায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৬১৮ জনের নমুনায়। এ নিয়ে বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫৪২ জন।
তাদের মধ্যে রংপুর জেলার ৬ হাজার ৬২৪ জন, পঞ্চগড়ের ১ হাজার ২৭৯ জন, নীলফামারীর ২ হাজার ৭৭ জন, লালমনিরহাটের ১ হাজার ৬৭৭ জন, কুড়িগ্রামের ২ হাজার ১৫ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ হাজার ৯৭৯ জন, দিনাজপুরের ৯ হাজার ৫৩৭ জন ও গাইবান্ধার ২ হাজার ৩৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এ নিয়ে বিভাগে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫৯২।