দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ৭৮ শতাংশের দেহেই ভারতীয় ধরন তথা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
দেশজুড়ে জুন মাসে তাদের করা করোনার জিনোমসিকোয়েন্সে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানানো হয়েছে।
আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে রোববার সন্ধ্যায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিসেম্বর থেকে দেশে করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে জুন মাসের জিনোমসিকোয়েন্সে দেখা যায়, করোনায় আক্রান্তদের ৭৮ শতাংশই ভারতীয় ধরনে সংক্রমিত।
মার্চে দেশে করোনায় আক্রান্তদের ৮২ শতাংশের দেহে ভারতীয় ধরন শনাক্তের তথ্য দিয়েছিল আইইডিসিআর। এ সময় আলফা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায় ১৭ শতাংশ মানুষের দেহে।
এপ্রিল মাসেও দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। মে মাসে করোনায় আক্রান্তদের ৪৫ শতাংশের দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ে। জুনে ধরা পড়ে ৭৮ শতাংশের দেহে।
ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে এশিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার অতি সংক্রামক এই ধরন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধরনটির নাম দিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
ভারতসহ বিশ্বজুড়ে করোনার দ্রুত সংক্রমণ বিস্তারের জেরে মে মাসের শুরুর দিকে করোনার ভারতীয় ধরনকে ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে উল্লেখ করে ডব্লিউএইচও। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল থেকে ছড়ানো করোনার ধরনকেও উদ্বেগজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।
সংক্রমণের হার হ্রাস করার লক্ষ্যে এবং দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টসহ করোনার অন্যান্য ধরনের বিস্তার রোধে জনসাধারণকে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর।
দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ‘কমিউনিটি সংক্রমণ’ ঘটছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি কার দ্বারা কীভাবে সংক্রমিত হলেন, সেটি যখন আর বোঝা যায় না, তখন সেটিকে সামাজিক সংক্রমণ বলে।
এ বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন নিউজবাংলাকে জানান, করোনার সবগুলো নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করা সম্ভব হয় না। সংক্রমণের যে ধরন, তা দেখে মনে হচ্ছে এটার সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে। এই ভ্যারিয়েন্টের মধ্য দিয়ে হঠাৎ করে করোনার তৃতীয় ঢেউ ফিরে আসার আশঙ্কা করছেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশে ভ্যারিয়েন্টটির প্রবেশ ঠেকাতে ২৬ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে যাত্রী চলাচলে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় সরকার। দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে এর মেয়াদ। ভারত ভ্যারিয়েন্টের আগে করোনার যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও সাউথ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। করোনার ভ্যারিয়েন্টগুলোকে আদি রূপের চেয়ে বেশি ভয়াবহ মনে করা হয়। কারণ ভ্যারিয়েন্টগুলো হয় বেশি সংক্রামক, প্রাণঘাতী অথবা টিকার বিরুদ্ধে কম কার্যকর।