বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সংক্রমণ বাড়লে অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা

  •    
  • ১ জুলাই, ২০২১ ১৫:৪৮

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, দেশে হাসপাতালে অক্সিজেনের দৈনিক চাহিদা ১২০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন। এখনও চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি। তবে চাহিদা বেড়ে সংকট দেখা দিলে এমনকি শিল্পকারখানায় সরবরাহ বন্ধ রেখে হলেও হাসপাতালে সরবরাহ নিশ্চিত করবে সরকার।

দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পর থেকেই করোনা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। ক্রমেই বাড়ছে মৃত্যু ও সংক্রমণ।

দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে হাসপাতালে এরই মধ্যে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে অক্সিজেন না পেয়ে বুধবার চারজন মৃত্যু হয়েছে।

রোগীর সংখ্যা আরও বাড়লে গোটা দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার শঙ্কা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, দেশে হাসপাতালে অক্সিজেনের দৈনিক চাহিদা ১২০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন।

দেশে বাণিজ্যিক কাজে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন তৈরি করলেও চিকিৎসাকাজে চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অক্সিজেন নেয় সরকার। মূলত শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য এ অক্সিজেন উৎপাদন হয়।

বর্তমানে সরকার এ চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হাসপাতালের জন্য ১৯০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের সরবরাহ নিচ্ছে। ফলে এখনও ৪০ থেকে ৭০ মেট্রিক টনের বেশি সরবরাহ সক্ষমতা থেকে গেছে।

চাহিদা বাড়লে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও চীন থেকেও অক্সিজেন আমদানি করা হয়। তবে ভারতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি সময়সাপেক্ষ।

যে হার করোনা রোগী বাড়ছে, এমন চললে দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে সারা দেশে অক্সিজেনের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ জন্য আগেভাগেই শিল্পকারখানায় অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে অধিদপ্তর।

দেশের অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে শনাক্ত হওয়ার পর থেকে চাহিদা বেড়েছে অক্সিজেনের। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার হাসপাতালগুলোতে এই চাহিদা বেশি। পরিস্থিতি এখন যেমন আছে, কোনো ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে করোনা সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি সামলানো কষ্টকর হবে।

প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এখন যে পরিস্থিতি, তাতে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ভবিষ্যতে চাহিদা বাড়লে তা পূরণে জটিলতা তৈরি হবে। চাইলে অক্সিজেনের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো সহজ নয়। এটি সময়সাপেক্ষ আবার বিপুল অর্থেরও বিষয় আছে।

অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যা বলছে

দেশে হাসপাতালগুলোর অক্সিজেনের ৯০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে লিনডে বিডি।

প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সাইকা মাজেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অক্সিজেনের চাহিদা অবশ্যই আগের চেয়ে বেড়েছে। গোটা বাংলাদেশে না হলেও সীমান্ত এলাকা থেকে অক্সিজেনের চাহিদা তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়েছে। চাহিদা বেড়েছে রাজধানী ঢাকাতেও। তবে আমরা যা উৎপাদন করি, তাতে চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে।’

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অক্সিজেন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান লিনডে বিডি। ছবি: সংগৃহীত

লিনডে বিডির কারখানায় দৈনিক ১১০ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদন হয়। এই মুহূর্তে চিকিৎসাকাজে তারা ৮০ মেট্রিক টন অক্সিজেন সরবরাহ করছে। চাহিদা বাড়লে শিল্পকারখানার অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দিতে হবে বলে জানান সাইকা মাজেদ। সরকারের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় প্ল্যান্ট স্থাপন এক বছরের আগে সম্ভব নয়।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলেছি, যদি আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, তাহলে আমরাও অক্সিজেন আমদানি করে দিতে পারব। এ ক্ষেত্রে সরকার-টু-সরকার কথা বলতে হবে।’

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, বর্তমানে তারা দৈনিক ৪০ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারেন। এর মধ্যে ২৫ মেট্রিক টন হাসপাতালে দিচ্ছেন তারা।

তিনি জানান, গত তিন সপ্তাহ ধরে অক্সিজেনের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। তবে আগের দামেই অক্সিজেন সরবরাহ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। তিনি বলেন, চাহিদা বাড়লেও এপ্রিলের মতো পরিস্থিত তৈরি হয়নি।

অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন লিমিটেডও দেশে উৎপাদন করে তরল অক্সিজেন। ছবি: সংগৃহীত

অক্সিজেন উৎপাদনকারী অপর প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের অক্সিজেন প্ল্যান্ট। তারা জানায়, প্রতিদিন ২০০ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদনের সক্ষমতা আছে কোম্পানিটির। এর মধ্যে ২০ টন তারা হাসপাতালে সরবরাহ করছে।

চাহিদা নিশ্চিত করতে দরকার পরিকল্পনা

করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ মনে করেন, অক্সিজেনের জন্য হাহাকার যেন তৈরি না হয়, সেদিকে নজর দেয়া উচিত।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অক্সিজেনের চাহিদা নিশ্চিত করতে একটি পরিকল্পনা দরকার। আগামী এক মাসে কী পরিমাণ অক্সিজেন লাগতে পারে, এর জোগান কীভাবে হবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। তবে আরও বেশি জোর দিতে হবে সংক্রমণ প্রতিরোধে।

‘লকডাউন শিথিল করে বিধিনিষেধের মাধ্যমে সংক্রমণটাকে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে হয়তো আমাদের সেই সংকটে পড়তে হবে না।’

প্রায় তিন সপ্তাহের লকডাউনে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করছেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, ‘লকডাউনের পর দুই বা তিন সপ্তাহের মাথায় মূল চিত্র ফুটে ওঠে। সেই বিবেচনায় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অবশ্যই আমরা বিজ্ঞানসম্মতভাবে আশা করছি, সংক্রমণের হার অনেক কমে যাবে।’

শিল্পকারখানায় সরবরাহ বন্ধ করার পরিকল্পনা

রোগী বাড়লে অক্সিজেন সংকট সামাল দেয়া নিয়ে চিন্তিত সরকারও। চাহিদা পূরণে শিল্পকারখানায় এই গ্যাসের সরবরাহকারীদের দিকে তাকিয়ে সরকার। তখন শিল্পকারখানায় সরবরাহ বন্ধ রেখে হাসপাতালে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার আলোচনাও চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোবেদ আমিন বলেন, ‘প্রতিবেশী ভারতে করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ার পরিস্থিতির মধ্যে দেশটিতে অক্সিজেন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছিল। অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন অনেক রোগী। এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সরকার আগে থেকেই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে শিল্পকারখানায় এই গ্যাস সরবরাহকারীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দুটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন দিতে রাজি হয়েছে।’

বর্তমান সময়ে অক্সিজেনের চাহিদা কেমন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘চাহিদা ১২০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টনের মতো। তবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়বে। এপ্রিল মাসে যখন সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছিল, তখন দৈনিক চাহিদা ছিল প্রায় ১৯০ মেট্রিক টনের।

রোবেদ আমিন বলেন, মূলত চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মেডিক্যাল অক্সিজেন নেয় সরকার। তাদের উৎপাদিত অক্সিজেন দিয়েই আমাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে। তবে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য কোম্পানি যারা শিল্পকারখানার জন্য অক্সিজেন তৈরি করে, তাদের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর