করোনা ভাইরাসের ‘ভারতীয় ধরন’ নিয়ে রয়েছে চরম আতঙ্ক ও শঙ্কা। দেশে বিশেষ ধরনের এ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতসংলগ্ন সীমান্ত সিল করা হয়েছে। তারপরও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজ শেষে ভারত থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় যারা দেশে ঢুকছেন, তাদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হচ্ছে।
যারা করোনা আক্রান্ত তাদের আলাদা চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর যারা সুস্থ তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। বর্তমানে খুলনায় এ রকম প্রায় ৩০০ ব্যক্তি রয়েছেন কোয়ারেন্টিনে।
খুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে অবস্থানরত কয়েকজন জানান, ভারত থেকে দেশে ফিরে খুলনায় বিভিন্ন হোটেল, রেস্ট হাউজসহ ২০টি প্রতিষ্ঠানে কোয়ারেন্টিনে আছেন প্রায় ৩০০ ব্যক্তি। গত তিন দিনে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরলে পুলিশ হেফাজতে তাদের খুলনায় আনা হয়। কোয়ারেন্টিনে অন্য সমস্যা না হলেও নিজ খরচে থাকা-খাওয়া তাদের জন্য অনেকটা কষ্টকর হচ্ছে। কোয়ারেন্টিন খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরা জয়পুরহাটের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম। বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছি। ফেরার আগে ভারতে করোনা পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ এলেও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলা হয়।
‘বেনাপোল থেকে পুলিশ পাহারায় খুলনার হোটেল পার্কে এনে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন ৮০০ টাকা করে ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া খাবারের খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা আমাদের জন্য ব্যয়বহুল।’
খুলনার পশ্চিম বানিয়া খামার বিহারি কলোনি মোড়ের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য স্ত্রী-দুই সন্তানসহ ভারত থেকে দেশে ফিরে খুলনার অ্যাম্বাসেডর হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রয়েছি। বেনাপোলে আসার পর আমাদের পুলিশ পাহারায় খুলনায় আনা হয়। যারা সিঙ্গেল পুরুষ ছিলেন তাদের খুলনার ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রাখা হয়।
‘পরিবারসহ যারা ছিলেন, তাদের বিভিন্ন হোটেলে রাখা হয়। সে ক্ষেত্রে সামর্থ্য অনুযায়ী তারা হোটেল পছন্দ করে নেন। পরিবারের কারণে আমাকে খুলনার অ্যাম্বাসেডর হোটেলে থাকতে হচ্ছে। এখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা রয়েছে।’
পার্ক হোটেলের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার মৃনাল কান্তি মণ্ডল জানান, বেশ কয়েকটি হোটেল জেলা প্রশাসন থেকে রিক্যুইজিশন করা হয়েছে। ভারত থেকে আগতরা এখানে উঠছেন। রোববার পর্যন্ত এখানে ৬০ জন নারী-পুরুষ অবস্থান করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ডাবল রুম ৮০০ এবং সিঙ্গেল রুম ৫০০ টাকা ভাড়া। হোটেলটিকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য নির্ধারণ করায় অন্য গেস্ট রাখা হচ্ছে না। হোটেলের গেট বন্ধ রাখা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা রয়েছে।’
খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘ভারত থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য ২০টি প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারণ করেছে প্রশাসন। এ পর্যন্ত ৩০০ জন অবস্থান করছেন। প্রতিদিন মানুষ আসছেন। খুলনায় ৭০০ জন রাখার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ভারত থেকে আসা এক যাত্রী যশোর থেকে পালিয়ে খুলনার পাইকগাছায় এলে তার পরিবারের একজন করোনায় আক্রান্ত হন। এটি ভারতীয় কোনো করোনার ধরন কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য তার নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পাইকগাছার বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।’
খুলনা মেডিক্যাল কলেজের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুভাষ রঞ্জন হালদার জানান, ভারত থেকে আসা যাত্রীদের মধ্যে একজন রোগী করোনা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার নাম শান্ত দাস, বয়স ৫০ বছর। ভারত থেকে আসা যাত্রীদের চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যালে তিনজন ডাক্তার দিয়ে একটি টিম করে দেয়া হয়েছে।