করোনাভাইরাসে রোগী বেড়ে গেলে অক্সিজেন সংকট দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তাই সংকট এড়াতে করোনার বিস্তার কমিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার বাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস- বিসিপিএস প্রাঙ্গণে ‘ভ্যাকসিন ইস্যু ও সমসাময়িক নানা বিষয়’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
প্রতিবেশী ভারতে করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ার পরিস্থিতির মধ্যে দেশটিতে অক্সিজেন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে অনেক রোগী।
বাংলাদেশেও বাড়ছে করোনা রোগী। তবে অক্সিজেন নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘অক্সিজেন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। আমাদের দেশে যে পরিমাণ অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে, এটা দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
‘তবে (দৈনিক শনাক্ত) যদি ৭ হাজারের জায়গায় ২১ হাজার হয় তাহলে অক্সিজেন সংকট হবে। তাই রোগী কমিয়ে আনতে হবে।’
বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে দৈনিক অক্সিজেনের চাহিদা ১২০ মেট্রিক টনের মতো। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত এক মাসে চাহিদা বেড়ে হয়েছে ১৮০ মেট্রিক টন। এর পুরোটা বাংলাদেশ উৎপাদন করতে পারে না।
দেশে অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা সর্বোচ্চ ১৭০ মেট্রিক টন। তবে নানা কারণে উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ ১৬০ মেট্রিক টন। বাকি ২০ মেট্রিক টন ভারত, চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হয়। কিন্তু ভারত থেকে আমদানি এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। আর চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি সময়সাপেক্ষ।
সংকট দেখা দিলে ভারতের বাইরে অন্যদেশ থেকে অক্সিজেন আনা হবে বলে জানালের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ হয়েছে। আমরা অন্য দেশ থেকে গ্যাস অক্সিজেন এনে হাসপাতালগুলোকে দেয়া হবে।’
সে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলা আর সেখানে নতুন স্ট্রেইনে অক্সিজেন সংকটের বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। শত শত রোগীর মৃত্যু হচ্ছে কেবল এ কারণে। এই অবস্থায় হন্যে ভারত বিদেশ থেকে বিমানে করে উড়িয়ে এনেছে অক্সিজেন উৎপাদনকারী সরঞ্জাম।
ভারতের এই করুণ দশায় বাংলাদেশে অক্সিজেন পরিস্থিতি কী, উৎপাদনক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ কী পরিমাণ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব, মজুত পরিস্থিতি কী, তা নিয়ে কথা হচ্ছে।
দেশের অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যা বলছে, সেটি সুখকর নয় কোনোভাবেই। তারা বলছে, এখন যে পরিস্থিতি, তাতেই চাহিদা পূরণ করা কঠিন। ভবিষ্যতে চাহিদা বাড়লে তা পূরণে আরও সমস্যায় পড়তে হবে।
অক্সিজেনের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো সহজ নয়। এটি সময়সাপেক্ষ আবার বিপুল অর্থেরও বিষয় আছে।
রোগী বাড়লে অক্সিজেন সংকট সামাল দেয়া নিয়ে চিন্তিত সরকারও। ২২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেশের অক্সিজেনের চাহিদা এবং সরবরাহ বিষয়ে একটি সভা হয়। সেখানেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছবি: নিউজবাংলা
শঙ্কায় খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, ‘অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লিনডে বিডির ১১০ মেট্রিক টন এবং স্পেকট্রার ৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন করার সক্ষমতা আছে। এ ছাড়া আরও কিছু ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন উৎপাদন করে।
‘তারপরও প্রায় ২০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাড়তি চাহিদা পূরণে মূলত অক্সিজেন ভারত, চীন, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়। ভারতে হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তারা অক্সিজেন দেয়া বন্ধ করেছে।’
ভারত থেকে অক্সিজেন আসে মূলত যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে। সেখান দিয়ে ২১ এপ্রিলের পর আর কোনো গাড়ি ঢোকেনি বলে জানিয়েছেন বন্দরের কর্মকর্তা ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা।
‘তাহলে চাহিদা বাড়লে কী করবে সরকার?’
জবাবে ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, ‘তখন হয়তো কিছুদিনের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন উৎপাদন বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন করতে বলা হবে।’
সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সারা দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে অক্সিজেন উৎপাদনে কারখানা স্থাপন করতে চান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে সেটাও হয়তো চলতি বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ মনে করেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন অক্সিজেনের হাহাকারের মতো পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকে নজর দেয়া উচিত।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অক্সিজেনের চাহিদা নিশ্চিতে একটি পরিকল্পনা দরকার। তবে আগামী এক মাসে কী পরিমাণ অক্সিজেন লাগতে পারে, এর জোগান কীভাবে হবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু আরও বেশি জোর দিতে হবে সংক্রমণ প্রতিরোধে।
‘লকডাউন শিথিল করে বিধিনিষেধের মাধ্যমে সংক্রমণটাকে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে হয়তো আমাদের সেই সংকটে পড়তে হবে না।’