করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। টিকা নেয়ায় আশানুরূপ সাড়া নেই যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের। দেশটি হাসপাতালগুলোর স্টোরে ও অন্যত্র পড়ে আছে লাখ লাখ ডোজ টিকা।
জনগণের এমন পিছু টানের ফলে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের প্রথম সপ্তাহে ২ কোটি টিকা দেয়ার যে পরিকল্পনা ছিল তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, ফাইজার ও বায়ো-এনটেকের টিকার মাত্র ১০ লাখ ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে, যা গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম ধাপে সরবরাহ করা মোট ডোজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) হিসাব মতে, দেশটির অঙ্গরাজ্যগুলোতে এখন পর্যন্ত ৯৫ লাখের বেশি টিকার ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অতি সম্প্রতি অনুমোদন পাওয়া মডার্নার টিকাও।
হাসপাতালগুলোতে মডার্নার টিকা বিতরণ শুরু হলেও এটির প্রয়োগ নিয়ে এখনও কোনো তথ্য দিতে পারেনি সিডিসি।
- আরও পড়ুন: ফাইজার, নাকি মডার্না: কোন টিকা ভালো?
তবে টিকা গ্রহণে মানুষের যে আগ্রহ কম তা স্পষ্ট প্রথম সপ্তাহের হিসাবেই। এই সময়ে সরবরাহ করা প্রায় ২৯ লাখ ডোজের মধ্যে প্রয়োগ করা হয়েছে ৬ লাখ ১৪ হাজার ডোজের মতো।
হাসপাতালগুলো বলছে, গত সোমবার শুরু থেকেই টিকা গ্রহণে খুব ধীর গতি লক্ষ্য করা গেছে। কোনো কোনো হাসপাতাল ও ক্লিনিক জানিয়েছে, যথাযথ সামাজিক দূরত্ব মেনে প্রথম দিন তারা মাত্র ১০০ জনকে টিকা দিতে পেরেছেন।
টিকা নেয়ায় অনীহা দেখা গেলেও করোনার প্রকোপ থেমে নেই যুক্তরাষ্ট্রে। ওয়ার্ল্ডো মিটারের হিসাব মতে, দেশটিতে এই ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার। শনাক্ত এক কোটি ৯০ লাখ ছুঁইছুঁই।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি ছিল, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই তারা ২ কোটি মানুষকে টিকা দেবে। কিন্তু তাদের এই লক্ষ্য পূরণ হবে কি না তা এখন কঠিন শঙ্কায়।
চলতি সপ্তাহে হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৫৯ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করার কথা মডার্নার। আর ফাইজারের সরবরাহ করার কথা আরও ২০ লাখ ডোজ।
মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ কম বলে জানালেন ট্রাম্প প্রশাসনের করোনার টিকা প্রকল্প ‘অপারেশন র্যাপ স্পিড’ এর প্রধান উপদেষ্টা ড. মনসেফ স্লাউই।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, টিকার পর্যাপ্ত ডোজ নিশ্চিত করা। কিন্তু মানুষের টিকা নেয়ার হার যেমনটা ধারণা করা হচ্ছিল তা থেকে কম।’
টিকার প্রয়োগ শুরুর আগে পিউ রিসার্স সেন্টারের এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মানুষ করোনার টিকা নিতে অনিচ্ছুক। দেশটির মাত্র ৬০ শতাংশ মানুষ করোনার টিকা নিতে প্রস্তুত বা রাজি। এর আগে সেপ্টেম্বরে জরিপে দেখা গিয়েছিল টিকা নিতে রাজি ৫১ শতাংশ মানুষ।
করোনার টিকার প্রতি নাগরিকদের আস্থা বাড়াতে গত সোমবার টেলিভিশন লাইভে এসে টিকা নেন যুক্তরাষ্ট্রের হবু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন।
এর আগে লাইভে টিকা নেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও তার স্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক তিন প্রেসিডেন্ট- বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটিনও প্রকাশ্যে করোনার টিকা নেবেন বলে জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে টিকা নিয়ে দেশটির নাগরিকদের ভুল ভাঙবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।