করোনার যে দুটি টিকা উন্নত বিশ্বে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলো নিয়ে আপাতত ভাবছে না সরকার। এখনও চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়া অক্সফোর্ডের টিকাই আনতে চায় তারা।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উন্নত বিশ্বে অনুমোদন পাওয়া ফাইজার ও মডার্নার টিকা প্রয়োগের মতো অবকাঠামো বাংলাদেশে নেই। এই দুটি টিকা যে ঠান্ডা পরিবেশে সংরক্ষণ করতে হয়, তৃণমূল পর্যায়ে এমন ব্যবস্থা নেই।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকার প্রধান ও অন্য সহকর্মীদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন জানান, চুক্তি করা অক্সফোর্ডের টিকা আসবে জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে। পরে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে একই কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে দিচ্ছে ফাইজারের টিকা দান শুরু হয়ে গেছে। মডার্নার টিকাও অনুমোদন পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই টিকা প্রয়োগের প্রস্তুতিও চলছে। রাশিয়ায় প্রয়োগ হচ্ছে তাদের দেশে উদ্ভাবিত স্পুৎনিক, যদিও এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান পশ্চিমা দুনিয়া।
তবে এসব কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ এখনও চুক্তি করেনি। সরকার আনতে চায় অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত টিকা, যেটির এখনও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়নি।
ভারতের প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি টিকা আনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
অক্সফোর্ড ছাড়া অন্য টিকা নিয়ে কেন ভাবা হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকে বড় সংকট মনে করছেন তারা।
- আরও পড়ুন: ফাইজার, নাকি মডার্না: কোন টিকা ভালো?
তিনি বলেন, ‘খুব ডিফিকাল্ট। আপনি গ্রাস রুট লেভেলে নিয়ে যাবেন তখন মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রা মেইনটেইন করার মতন কোনো স্ট্রাকচার আমাদের নেই। হয়ত কোল্ড স্টোরেজগুলোতে রাখতে পারবেন। তারপর যখন বের করবেন, তখন মাইনাস ৭০ ডিগ্রি মেইনটেন করা খুব ডিফিকাল্ট।’
মর্ডানার টিকা সাধারণ রিফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা যায়। এই বিষয়টি স্মরণ করালে সচিব বলেন, ‘এটা তো টেকনিক্যাল বিষয়। আমাদের কাছে যে স্পেসিফিকেশন আছে, আমরা তো টেকনিক্যাল লোক না… টেকনিক্যাল যে কমিটি আছে এটা উনারা দেখবেন। তারা যদি মনে করেন আমাদের যে স্ট্রাকচার আছে, সেখানেই মেজর কোনো চেঞ্জ না করে দেয়া যাবে, হ্যাজার্ড হবে না... এটাতো টেকনিক্যাল বিষয়।
‘আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি, মর্ডানা ও ফাইজার যে দুটি আছে সেটার একটি মাইনাস ২৫, আরেকটি মাইনাস ৭০ ডিগ্রিতে রাখতে হয়। এটা ডিফিকাল্ট।’
আরেক প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘আপাতত অক্সফোর্ড নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। যদি অন্য কেউ আসে ডব্লিউএইচওর অ্যাপ্রুভালসহ, তাহলে সরকার কাউকে মানা করবে না। তবে তাকে ডব্লিউএইচওর এর প্রটোকল মানতে হবে।’
নয় কোটি টিকা জুনের মধ্যে
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আগামী জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে অক্সফোর্ডের তিন কোটি টিকা আসার পর আরও ছয় কোটি আসবে বছরের মাঝামাঝি সময়ে।
এই টিকা আসবে বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা সরবরাহের জন্য গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্সের মাধ্যমে।
এই জোটটি বিশ্ব জুড়ে ২০০ কোটি টিকা সরবরাহ করবে। মধ্য ও নিম্ন মধ্য আয়ের দেশকে স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করা হবে এই টিকা।
করোনা টিকা আসার আগে প্রশিক্ষণ
করোনার টিকা আসার আগেই যারা এগুলো প্রয়োগ করবেন, তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে সরকার। এই কর্মযজ্ঞে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্তির চিন্তাও করা হচ্ছে।
পরিষদ সচিব বলেন, ‘এ জন্য গ্রাসরুট লেভেলের সবাইকে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ইনফেকশন যেন না হয় বা কটনগুলো কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সেগুলো কীভাবে ডিসপোজেবল করা হবে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
‘প্রাইভেট সেক্টর এর সঙ্গে ওনারা আলাপ আলোচনা করছেন যে, প্রাইভেট সেক্টরকে ইনক্লুড করে ভ্যাকসিন দেয়া যায় কি না।’