বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের বাসভবনে হামলা চেষ্টার সময় আনসার সদস্যরা কত রাউন্ড গুলি ছুড়েছেন তার হিসাব মেলেনি পাঁচ দিনেও। ওই ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হলেও আনসার সদস্যদের গুলির হিসাব দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কেউ।
আনসার সদস্যদের ছোড়া গুলিতে সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ, প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনসহ ৩০ জন আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গুলিতে চোখ হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতা। মামলা হয়েছে মেয়রসহ ৬০২ জনের বিরুদ্ধে। তবে এখন পর্যন্ত গুলির হিসাব পাওয়া যায়নি।
বরিশাল আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট আমমার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার রাতের ঘটনাটি ছোটখাটো কোনো ঘটনা নয়, এটি অনেক বড় ঘটনা। ফলে ওই ঘটনা নিয়ে তৎজলদি মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর পরই একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। সোমবার বিকেলের মধ্যে ওই কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনা ছিল। তবে কাজ শেষ করতে না পারায় তারা আজ প্রতিবেদন জমা দেননি।
‘তদন্ত কমিটি জানিয়েছে আরও দুই দিন তাদের সময় লাগবে। আনসার সদস্যরা কত রাউন্ড গুলি করেছেন তা এখনও নিশ্চিত নয়। আনসার সদস্যরা কার নির্দেশে গুলি ছুড়েছিল-এসব বিষয় স্পষ্ট হতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বরিশালে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি জানান, ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ দুজন আনসার সদস্য এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ফারুক গাজীর পায়ে গুলি লেগেছে। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত আরেক আনসার সদস্য মাহতাব বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার রাতের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ সদস্যরা এক রাউন্ড গুলিও করেননি।’
শোক দিবসের ব্যানার অপসারণের জেরে সিটি করপোরেশন ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের (ইউএনও) আনসার বাহিনী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয় বুধবার মধ্যরাতে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে বুধবার রাতে শোক দিবসের ব্যানার খুলতে যান বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। এ সময় ব্যানার খোলার কারণ জানা নিয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সঙ্গে সিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কথা-কাটাকাটি হয়।
প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ওই সময় ইউএনওর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে সেখানে উপস্থিত আনসার সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হলে উপস্থিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় হামলার চেষ্টা চালান। এ সময় আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়লে প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ চারজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যুবলীগ নেতা শাহরিয়ার বাবু, হারুন অর রশিদ ও তানভীরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সংঘর্ষের পর ইউএনও কার্যালয়ের সামনে পুলিশ অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ফের ইউএনওর বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেন।
এ সময় পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন। ওই ঘটনার পর থেকে চার দিন থমথমে অবস্থা ছিল বরিশাল নগরীতে।
তবে রোববার রাতে বরিশালের পরিস্থিতির সমাধান নিয়ে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদলের বৈঠক শেষে জানানো হয়, এ ঘটনা ‘ভুল-বোঝাবুঝি’ থেকে হয়েছে। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে বলেও জানানো হয়।