প্রতারণা করে গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ই-কমার্স সাইট ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
ঢাকার মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূইয়া সোমবার শুনানি শেষে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
রিমান্ডের আদেশ পাওয়া অপর আসামি হলেন ই-অরেঞ্জের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্যাহ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম তিন আসামিকে তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেছিলেন।
আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির জন্য সোমবার তারিখ ঠিক করে।
এ দিন আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। তাদের পক্ষে আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদুর রহমান আজাদ জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন গ্রহণ করে মামলার তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করার আবশ্যকতা রয়েছে।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নাকচ করে রিমান্ডের আদেশ দেন।
বিষয়টি আদালতের গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলা ও গ্রেপ্তার
প্রতারণার অভিযোগ করে গত ১৭ আগস্ট সকালে মামলাটি করেন ই-অরেঞ্জের গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। প্রতারণার শিকার বলে দাবি করা আরও ৩৭ জন উপস্থিত থেকে তার সঙ্গে সাক্ষ্য দেন।
মামলার পরপরই সোনিয়া মেহজাবিন ও মাসুকুর রহমান আদালতে এসে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় আমান উল্যাহকে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে ২৪টি ক্রেডিট কার্ড, ১৬ লাখ টাকা এবং গাড়ি জব্দ করা হয়।
মামলায় যত অভিযোগ
মামলায় তাহেরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তিনি গত ২১ এপ্রিল পণ্য কেনার জন্য ই-অরেঞ্জে অগ্রিম টাকা দেন। তবে ই-অরেঞ্জ নির্ধারিত তারিখে পণ্য সরবরাহ করেনি। টাকা ফেরতও দেয়নি।
তাহেরুলের অভিযোগ, ই-অরেঞ্জ নিজেদের ফেসবুক পেজে বারবার নোটিশ দিয়ে সময় চেয়েছে। কিন্তু পণ্য ও টাকা দেয়নি। সবশেষ তারা গুলশান-১-এর ১৩৬/১৩৭ নম্বর রোডের ৫/এ নম্বর ভবনে অবস্থিত অফিস থেকে পণ্য ডেলিভারির কথা বললেও তা দেয়নি। এ ছাড়াও তারা যে বিভিন্ন আউটলেটের গিফট ভাউচার বিক্রি করেছিল, সেগুলোর টাকা আটকে রাখায় আউটলেটগুলো ভাউচারের বিপরীতে পণ্য দিচ্ছে না।
গ্রাহক তাহেরুল বলেন, ‘এই করোনাকালীন আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ পাচ্ছি না; বরং প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি। এ ছাড়াও আজ পর্যন্ত তারা (ই-অরেঞ্জ) ভুক্তভোগীদের কোনো পণ্য ডেলিভারি না করে এক লাখ ভুক্তভোগীর প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করেছে।’