বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজও সরব আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
নগরীর সোহেল চত্বরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার বিকেলে সমাবেশ করেছেন জেলা ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশ থেকে মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিগার সুলতানা হনুফা বলেন, ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইউএনও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছেন। অথচ ইউএনওর বিচার না করে উল্টো মামলা হয়েছে মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। মেয়রের বাসভবনের ওই কর্মসূচি থেকে মহানগর আওয়ামী লীগে সহসভাপতি গাজী নইমুল হোসেন লিটু বলেন, ‘ইউএনও মুনিবুর রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মেয়রের সঙ্গে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করেছেন। এদিন ইউএনওর বাসায় কোনো হামলা হয়নি।’
এর মধ্যেই বরিশালের ঘটনায় মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। পুরো বরিশাল বিভাগ মেয়রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ করে তার গ্রেপ্তারের দাবিও জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংগঠনের এক জরুরি সভা শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ দাবি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও তার দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপােরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। তারা পুরো জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।
একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্য নিয়েও চলছে সমালোচনা।
শোক দিবসের ব্যানার অপসারণের জেরে বুধবার রাতে সিটি করপোরেশন ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের (ইউএনও) আনসার বাহিনী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে অনেকে আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বরিশালে লঞ্চ ও বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে বিজিবি মোতায়েন করার কথা জানায় প্রশাসন।
পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। ছবি: নিউজবাংলা
বৃহস্পতিবার দিনভর টান টান উত্তেজনার পর শুক্রবার জনজীবন ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। সকাল থেকে সড়কে ঘুরেছে গাড়ির চাকা। যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে ছুটেছে নৌযান।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বরিশালে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়নের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি। তবে আশপাশের জেলা থেকে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মহানগরীতে যান বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে টহল দিচ্ছেন র্যাব সদস্যরা।
নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় কথা হয় অটোরিকশাচালক সিদ্দিকুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই গাড়ি চালাচ্ছি, কোনো জায়গায় কেউ বাধা দেয়নি। স্ট্যান্ডগুলোতে বাসও চলতে দেখেছি। সড়কে অনেক লোক রয়েছে।’
নগরীর সদর রোড এলাকার চা দোকানি মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘শহরে কোনো সমস্যা দেখছি না। আমরা স্বাভাবিকভাবেই দোকান খুলেছি। তবে রাস্তায় পুলিশ ও র্যাব দেখেছি অনেক।’
বরিশাল জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাসরেক বাবুল জানান, সকাল থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আগের নিয়মে বাস চলছে। শুক্রবার হলেও যাত্রীর চাপ রয়েছে।
বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও বাধাবিপত্তির খবর পাওয়া যায়নি।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর নাজমুল হুদা বলেন, ১০ প্লাটুন বিজিবি ও ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে ম্যাজিস্ট্রেটরা এসেছেন। তবে বিজিবির মোতায়েন বা টহল এখনও শুরু হয়নি। তারা আশপাশের জেলায় অবস্থান নিচ্ছে। প্রয়োজন হলে আসবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আলী আরশাদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল বলেন, বরিশালের পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। এ মুহূর্তে বিজিবি নামানোর প্রয়োজন নেই। তবে বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে।
হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আলাদা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। মামলার বাকি আসামিদের ধরতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাতভর অভিযান চালানো হয়। তবে অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
পুলিশ ও ইউএনও মুনিবুর রহমানের করা দুটি মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে। তিনি ছাড়া আসামি ৬০১ জন।
মেয়রের ওপর হামলার ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া বাবুগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।