করোনায় আক্রান্ত মা-ছেলে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় মাকে নেয়া হয় হাসপাতালে। এর মধ্যে ছেলেরও অবস্থা আশঙ্কাজনক, লাগবে আইসিইউ। শহরের কোথাও কোনো আইসিইউ ফাঁকা নেই।
এ খবর জেনে মা আইসিইউ ছেড়ে দিলেন ছেলের জন্য। কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যু হয় সেই নারীর।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের এই ঘটনা গণমাধ্যমে আসার পর নাড়া দেয় দেশবাসীকে।
ঘটনা দিন বিশেক আগের। মায়ের ছেড়ে দেয়া আইসিইউর সাপোর্ট পেয়ে এখন সুস্থতার পথে সেই ছেলে। যেন মায়ের আয়ুতে তিনি জীবন ফিরে পেলেন।
সেই মায়ের নাম কানন প্রভা পাল। বাড়ি চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার দিদার মার্কেট এলাকায়। তার ছেলে শিমুল পালকে সোমবার জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ থেকে নেয়া হয়েছে সাধারণ ওয়ার্ডে।
হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও কোভিড ফোকাল পারসন আবদুর রব মাসুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওনার (শিমুলের) শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় সোমবার দুপুরে আইসিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে নেয়া হয়েছে। দু-এক দিন পর্যবেক্ষণের পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হবে।
‘এখন অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৭ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকলে দৈনিক ২-৩ লিটার অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। আইসিইউতে থাকার সময় সর্বোচ্চ ১০০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দিতে হয়েছিল তাকে।’
শিমুলের মায়ের আইসিইউ ছেড়ে দেয়ার সেদিনের স্মৃতি এখনও আবেগতাড়িত করে এই চিকিৎসককে। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরুপায় ছিলাম, কিছুই করার ছিল না। মাকে আগে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। ছেলে ভর্তি ছিলেন সাধারণ ওয়ার্ডে। কিন্তু ছেলের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন হয়।
‘তখন শহরের কোথাও আইসিইউ খালি ছিল না। মা এ খবর জানতে পেরে তার বেড ছেড়ে দেন। কথা বলতে পারছিলেন না তিনি, ইশারায় অনুরোধ করছিলেন আমাদের। পরে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে ছেলেকে মায়ের বেডে নেয়া হয়। আইসিইউ থেকে বের করার এক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান মা। ছেলের অবস্থাও তখন সংকটাপন্ন।’
আইসিইউ বিভাগের প্রধান রাজদ্বীপ বিশ্বাস বলেন, ‘১৫ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মা কানন প্রভা। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে ২২ জুলাই আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন হয়। এর আগের দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে একই হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি হন ছেলে শিমুল পাল।’
পরে ছেলের জন্য আইসিইউ ছেড়ে গত ২৭ জুলাই মৃত্যুকে বরণ করে নেন কানন প্রভা।