বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই মিনুর মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টে নথি তলব

  •    
  • ১৬ আগস্ট, ২০২১ ১৮:৩৩

২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুমী ‘সেজে’ মিনু আক্তার ‘স্বেচ্ছায়’ সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু আক্তার। এর ১৩ দিনের মাথায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ লিংক রোডে ট্রাকচাপায় মৃত্যু হয় মিনুর।

অন্যের হয়ে জেল খাটা চট্টগ্রামের মিনু আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্ট মামলার নথি তলব করেছে।

বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।

কারামুক্তির ১৩ দিনের মাথায় ট্রাকচাপায় মিনুর মৃত্যুর ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড তা খতিয়ে দেখতে দায়ের করা অপমৃত্যু মামলাটির সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করেছে হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে ‘প্রতারণার’ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কুলসুমা আক্তার কুলসুমী যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সেটিও তলব করেছে আদালত।

দুই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আগামী ১ সেপ্টেম্বর মামলার নথি (কেস ডকেট -সিডি) নিয়ে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী।

মামলা থেকে জানা যায়, মুঠোফোন নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পোশাককর্মী কোহিনুর আক্তার ওরফে বেবিকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়।

পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই বছরের ২৬ অক্টোবর কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীকে গ্রেপ্তার করে। ৩১ অক্টোবর রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এক বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুলসুমী জামিনে বের হয়ে আসেন।

পরে ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

তার জামিনের প্রায় আট বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলার রায় দেয়।

রায়ে কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

রায়ের দিন অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এর পর ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুমী ‘সেজে’ মিনু আক্তার ‘স্বেচ্ছায়’ সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল আসামি কুলসুমী এ রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন। ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট আপিল গ্রহণ করে।

পরবর্তীতে দণ্ডিত এই নারী জামিন আবেদন করলে চলতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তা বাতিল করে দেয়।

এদিকে গত ২১ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর চতুর্থ দায়রা জজ আদালতকে চিঠি দিয়ে জানায়, কারাগারে থাকা নারী দণ্ডিত কুলসুমী নন।

পরদিন কারাগারে থাকা মিনু আক্তারকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি জবানবন্দি দেন।

ওই সময় জবানবন্দিতে মিনু আক্তার বলেছিলেন, ‘মর্জিনা নামের এক নারী তাকে চাল, ডাল দেবে বলে জেলে ঢুকায়। তিনি প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তারকে চেনেন না।’

একই সঙ্গে আদালত কারাগারের নিবন্ধন দেখে হাজতি আসামি কুলসুমী ও সাজাভোগকারীর মধ্যে অমিল খুঁজে পান।

তখন আদালত কারাগারের নিবন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট কিছু নথি হাইকোর্টে কুলসুমীর করা আপিলের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য পাঠায়।

এই ঘটনা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেলে আইনজীবী মো. শিশির মনির তা আপিলসংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন।

পরে ১ এপ্রিল এই বিষয়ে শুনানির পর ৫ এপ্রিল আদেশের জন্য রাখে। কিন্তু আদেশের আগে ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হলে তা হাইকোর্টের এই বেঞ্চে (যে বেঞ্চ থেকে আজ আদেশ হলো) উপস্থাপন করা হয়।

টানা দুইদিন শুনানির পর গত ৭ জুন মিনু আক্তারকে মুক্তির নির্দেশ দেয়। সেই সাথে দণ্ডিত কুলসুমীকে দ্রুত গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু আক্তার।

মুক্তির ১৩ দিনের মাথায় গত ২৮ জুন রাত সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ লিংক রোডে ট্রাকচাপা পড়েন মিনু, পরে ভোরের দিকে তার মৃত্যু হয়। যদিও মৃত্যুর পাঁচ দিন পর মিনু আক্তারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কথা জানায় পুলিশ।

মিনুর মৃত্যুর এক মাস পর গত ২৮ জুলাই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গভীর রাতে নগরীর ইপিজেড থানাধীন ২ নম্বর মাইলের মাথা কমিশনার গলি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কুলসুমীকে। তাকে সহযোগিতা করায় মর্জিনা আক্তারকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে তাদের নামে পুলিশ প্রতারণার মামলা করে। এই মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে কুলসুমা আক্তার কুলসুমী।

এ বিভাগের আরো খবর