বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মোর পোলারে যারা জঙ্গি বানাইছে হ্যাগোও বিচার চাই’

  •    
  • ১৪ আগস্ট, ২০২১ ১০:৫৬

রাজুর বাবা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘হারাডা জনম গায় খাইট্টা কামাই কইররা পোলাডারে পড়ালেহা করাইছি। এহন খবর হুনি মোর পোলায় বোলে জঙ্গি, বোমা বানায় জঙ্গিগো।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন জাহিদ হাসান রাজু। বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার লেমুয়া গ্রামে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের গ্যালারিতে গত ৩০ জুন সংবাদ সম্মেলনে এসে তার মা আকলিমা বেগম জানান, ৫ দিন ধরে নিখোঁজ রাজু; তাকে অপহরণ করা হয়েছে।

ছেলেকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জিও জানান তিনি। সেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব কবির, অধ্যাপক সুবর্ণা কর্মকার ও সহযোগী অধ্যাপক আওলাদ হোসেন।

নিখোঁজের ৪৮ দিন পর গত ১১ আগস্ট রাজধানীর কাফরুল এলাকায় পাওয়া যায় জাহিদ হাসান রাজুকে। তবে নিখোঁজ হিসেবে নয়, তাকে গ্রেপ্তার করা হয় নব্য জেএমবির পলাতক সদস্য হিসেবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট জানায়, রাজু সিটিটিসির মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি ছিলেন; পুলিশের কাছে পরিচিত ‘বোমা মিজান’ নামে। সহযোগীরা তাকে ডাকে ফোরকান ভাই নামে।

সিটিটিসির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে জানান, রাজু নব্য জেএমবির বোমা তৈরির প্রধান কারিগর।

এই খবরে এখনও মানতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন রাজুর মা, স্ত্রী ও গ্রামের লোকজন।

রাজুর মা আকলিমা বেগম নিউজবাংলাকে জানান, ছেলের জন্ম ১৯৯৪ সালের ১২ অক্টোবরে, লেমুয়া গ্রামে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন তিনি। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে জাবির রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন।

আকলিমা জানান, জাবিতে ভর্তির জন্য আবদুল খালেক নামের এক শিক্ষকের কাছে পড়তেন রাজু। খালেক পরে ঢাকায় গিয়ে মিরপুরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ২০১১ সালে রাজু ঢাকায় গিয়ে তারই বাসায় ওঠেন।

এরপর থেকে রাজু ধর্মচর্চা শুরু করেন। তিনি দাড়ি রাখেন; নিয়মিত পাঞ্জাবি-টুপি পরতে শুরু করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে বাড়িতে তার আসা-যাওয়া কমতে থাকে।

২০১৮ সালের জুন মাসে বিয়ে হয় রাজুর। সংসারে আছে এক বছর বয়সী মেয়ে।

রাজুর বাবা হুমায়ুন কবির ঘটনা জানার পর বলেন, ‘হারাডা জনম গায় খাইট্টা কামাই কইররা পোলাডারে পড়ালেহা করাইছি। এহন খবর হুনি মোর পোলায় বোলে জঙ্গি, বোমা বানায় জঙ্গিগো।'

‘এই খবরডা হুইন্না মোর মন চাইছে দুন্নই (দুনিয়া) ছাইড়্যা চইল্যা যাই। পোলার কামাই খাওন তো শ্যাষ, সোমাজে (সমাজে) যে মুক দেহামু হেই উপায়ডাও আর রাখল না। মোর পোলারে যারা জঙ্গি বানাইছে মুই হ্যাগোও বিচার চাই।’

পরিবার সদস্যদের দাবি, পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতেন রাজু। যখন বাড়ি যেতেন, তখন পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়তেন। এর বাইরে ঘরে মোবাইল ও ল্যাপটপে সময় কাটাতেন।

রাজুর স্ত্রী জানান, বিয়ের পর ঠিকমতো খোঁজখবর না রাখায় কলহ হয়। এ কারণে বেশিরভাগ সময় বাবার বাড়িতেই থাকেন তিনি।

প্রতিবেশী অশেষ বরণ তালুকদার বলেন, ‘এলাকা ছাড়ার পর খুব একটা গ্রামের বাড়িতে আসত না রাজু। তবে যতবারই এসেছে, সে বাড়িতেই বেশি থাকত।’

ইউপি সদস্য ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘রাজুকে আমরা ভদ্র ছেলে হিসেবে চিনতাম। তবে এর আড়ালে যে সে জঙ্গি কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে পড়বে, এটা আমরা কখনও বুঝিনি।’

দুই সহযোগীসহ রাজুকে রাজধানীর কাফরুল থেকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি

সিটিটিসির তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে ১০-১২টি পুলিশ বক্সে বোমা হামলার চেষ্টা করে নব্য জেএমবির জঙ্গিরা। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার জঙ্গিরা জানায়, নব্য জেএমবির বোমা বানানোর সেল রয়েছে। এই সেলের প্রধান রাজু।

সিটিটিসির তথ্যমতে, জঙ্গিদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিতে অনলাইন সেল খোলেন রাজু। এই সেলগুলোকে বলা হয় ‘ইদাদ’। এমন তিনটি ইদাদ রয়েছে। প্রতিটি ইদাদে ২০ জন করে সদস্য তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করার জন্যই এই সেল খোলা হয়।

রাজুকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ‘... ছাত্র হিসেবে তিনি খুবই মেধাবী ছিলেন। কিন্তু জঙ্গিবাদে জড়িয়ে এবং হিজরত করার (অন্য জায়গায় যাওয়া) কারণে তিনি তার মাস্টার্স কোর্স শেষ করতে পারেননি।’

রাজু ২০১৬ সালে নব্য জেএমবির তৎকালীন আমির মুসার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ায় বলে জানান আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, মেধা ও দক্ষতার কারণে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিরা তাকে সামরিক শাখায় নিয়োগ দেয়। এরপর বোমা ও গ্রেনেড তৈরিতে পারদর্শী হয়ে রাজু প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন।

আসাদুজ্জামান জানান, বড় কোনো রাসায়নিক সরবরাহ কোম্পানিতে চাকরি করে সেখান থেকে কেমিক্যাল নিয়ে আইইডি বানানোর পরিকল্পনা ছিল রাজুর। তার ও দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর