বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কেনা দামি ও বিলাসবহুল গাড়ি বোর্ড অফ ট্রাস্টির সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করছেন। এ অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মুখে এসব গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ফেরত দিয়েছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ৯ সদস্য।
বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের নানা রকম অনিয়মের অভিযোগের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গাড়িসংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়টি নজরে আসে। এ নিয়ে তদন্তও করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, ২০১৯ সালে ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ‘জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কোম্পানির’ ৯টি ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়ি কেনা হয়, যেগুলো ‘রেঞ্জ রোভার ২০১৯’ মডেলের। প্রতিটি গাড়ির দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা।
বিলাসবহুল এসব গাড়ি ব্যবহার করতেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অফ ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য বেনজীর আহমেদ, এম এ কাশেম, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, ফৌজিয়া নাজ, ইয়াসমীন কামাল ও তানভীর হারুন।
প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এম এ হাসেম একটি গাড়ি ব্যবহার করলেও তার মৃত্যুর পর গাড়িটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দেয়া হয়। এম এ হাসেমের মৃত্যুর পর তার ছেলে আজিজ আল কায়সার (টিটু) সদস্য হিসেবে যুক্ত হলেও তিনি কোনো ধরনের গাড়ি সুবিধা নেননি। বাকি ট্রাস্টি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সার্বক্ষণিকভাবে এসব গাড়ি ব্যবহার করতেন।
গাড়িগুলোর চালক, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচও দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সমালোচনার মুখে সেই গাড়িগুলো ফেরত দিয়েছেন ট্রাস্টিরা। এখন সেগুলো এনএসইউর পার্কিংয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নর্থ সাউথের বোর্ড অফ ট্রাস্টি বেনজীর আহমেদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিলাসবহুল গাড়ি ফেরত দেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি। আর এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’
গাড়ি ফেরত দেয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। তবে ঘটনাটি যদি সত্যি হয়, তাহলে বলব, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে।’
গত ১৪ জুলাই ‘কাশেম-আজিম সিন্ডিকেটের দুর্নীতি, ডুবছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। প্রতিবেদনে ৩ কোটি টাকায় গাড়ি কেনার কথা বলা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তাকে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় গাড়ি কেনা নিয়ে তখন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেছিলেন, ‘এটা একটা আর্থিক স্বেচ্ছাচারিতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় যত আয় করবে, তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চালিয়ে যা অতিরিক্ত থাকবে, সেটা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উন্নয়নকাজ করা হবে।
‘এখানে গাড়ি কেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা যে কমিটমেন্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করেছেন, তার সঙ্গে এটা কোনোভাবেই যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা অবশ্যই অনিয়ম। এটা আর্থিক স্বেচ্ছাচারিতা।’