পরীমনির রিমান্ড ও জামিন আবেদনের শুনানিতে আদালতে এসেছে ৯০ বছর আগে ঢাকা থেকে নির্মিত একটি নির্বাক চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ। দ্য লাস্ট কিস নামে ওই চলচ্চিত্রের নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন ললিতা নামের এক যৌনকর্মী।
চার দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার পরীমনিকে আবারও পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে সিআইডি। এর বিরোধিতা করতে গিয়ে পরীমনির আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান আদালতে দৃষ্টান্ত হিসেবে ওই সিনেমাটির প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকার নবাববাড়িতে আগে বাইজি রাখা হতো। সেখানে মানুষজনকে সুস্থ বিনোদন তারা দিতেন। যদি ইতিহাসে যাই তাহলে দেখা যায় সেসব বাইজির বিরুদ্ধে কোনো মামলা হতো না। সেখানে বাইজি নায়িকা ললিতা রায় সিনেমা করেছিলেন দ্য লাস্ট কিস। সেখানে দৃশ্যে দৃশ্যে মদ ছিল, সেখানে তো মামলা হয়নি।’
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, দ্য লাস্ট কিস ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৩১ সালে। এটি ছিল ঢাকাই চলচ্চিত্রের একেবারে প্রথম যুগের ছবি। দ্য ইস্ট বেঙ্গল সিনেমাটোগ্রাফ কোম্পানির প্রযোজনায় নির্বাক এই চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন অম্বুজপ্রসন্ন গুপ্ত। এতে খাজা আজমলসহ নবাববাড়ির অনেক পুরুষ সদস্য অভিনয় করেছিলেন। খাজা আজমল অভিনয় করেন নায়কের চরিত্র। আর নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন ললিতা, যিনি ছিলেন বাদামতলী যৌনপল্লির এক যৌনকর্মী।
চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ঢাকার মুকুল হলে, পরে যেটির নাম হয় ‘আজাদ হল’। এর প্রিমিয়ার শো উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার।
পরীমনির আটক ও মামলার সঙ্গেদ্য লাস্ট কিস চলচ্চিত্র ও ললিতার তুলনা কেন এলো, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান নিউজবাংলাকে পরে বলেন, ‘ললিতাকে তখন সমাজ ঘৃণা করত, কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। আমরা ধীরে ধীরে ভদ্রসমাজে চলে এসেছি। এখন সমাজের লোকেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সম্মানের চোখে দেখে।
‘এখন তাদের বিতর্কিত করা হলে আমরা ইতিহাসে আবার পেছনে চলে যাব। সমাজে তাদের সম্পর্কে আবার বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে। পরীমনিকে আবার রিমান্ডে দেয়ার মাধ্যমে সমাজে একটি ভুল বার্তা দেয়া হবে।’
আদালতে শুনানিতে আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, ‘ফোর্বস ম্যাগাজিনে বিশ্বের ৫০ জন অভিনেত্রীর সঙ্গে পরীমনির ছবি ছাপা হয়েছে। তিনি একজন স্বনামধন্য নায়িকা। ইতোমধ্যে তার অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। এমতাবস্থায় একজন সিনেমা আর্টিস্টের রিমান্ড হওয়াটা আদৌ উচিত নয়। এটা একটি ছোট্ট মাদক মামলা। ইতোমধ্যে তিনি চার দিনের রিমান্ডে ছিলেন। তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
‘উদ্ধার যা করার, তা তো করেই ফেলেছে। আর তো কিছু ছিল না। তাহলে এ রিমান্ড কেন? যদি দিতেই হয়, তাহলে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিতে পারে আদালত। এটি একটি জামিনযোগ্য মামলা। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড দেয়ার কোনো মানেই হয় না।’
আইনজীবী মজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘যদি উনি মাদক সেবন করেই থাকেন এবং মাদকের আইটেম যদি তার ঘরে পাওয়াও যায়, তাহলে আইন অনুযায়ী তাকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে পাঠানো হোক, রিমান্ড কেন? পরীমনি তো কোনো ক্যাডার নন। আমরা মামলার কোনো রিমান্ড আবেদন দেখতেই পারিনি।’
এই আইনজীবী রিমান্ডে যথাযথ যত্নের অভাবের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘পরীমনি একজন নায়িকা, তার একটি আলাদা লাইফস্টাইল আছে। সাধারণ সবার সঙ্গে মেলালে চলবে না। তাকে যে কাপড়ে বাসা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে, সেই কাপড়েই আদালতে তোলা হয়েছে। চার দিনের রিমান্ড শেষে তাকে সেই এক কাপড়েই আদালতে হাজির করা হয়েছে। তিনি তার কাপড় পাল্টানোর সুযোগ পাননি।’
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু ও সাজ্জাদুল হক শিহাব বলেন, পরীমনিকে নতুন কাপড় দেয়া হয়েছিল। তিনি তা পরেননি।