নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা দেয়া রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের মাস্টার ও সুকানিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটিও গঠন করেছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ।
সংস্থাটির পরিচালক (কারিগরি) রাশেদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়েছে এই তদন্ত কমিটি। সার্বিক বিষয় তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন ফেরির ইনল্যান্ড মাস্টার দেলোয়ারুল ইসলাম এবং হুইল সুকানি আবুল কালাম আজাদ।
বিআইডব্লিউটিসির এক অফিস আদেশে সোমবার বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হবে। এই আদেশের বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে কর্মচারী চাকুরী প্রবিধানমালা-১৯৮৯ এর ৪৬(১) ধারা মোতাবেক তাদেরকে চাকুরী হতে সাময়িক বরখাস্ত করে ডিসিপিএম (ফ্লিট) দপ্তরে নিয়মিত হাজিরা থাকার নির্দেশ প্রদান করা হলো।‘
বরখাস্তকালীন তারা বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা পাবেন বলেও জানানো হয়েছে।
অফিস আদেশে আরও বলা হয়েছে, ‘দায়িত্বপূর্ণ কর্মচারী হিসেবে ফেরিটি অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে পরিচালনা করা তাদের উচিত ছিল। পদ্মা সেতুর নিচে এ ধরনের দুর্ঘটনা কোনোমতেই কাম্য নয়। তাদের এমন কার্যকলাপ চাকুরীর নিয়ম শৃঙ্খলার পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাদের এহেন কার্যকলাপ অদক্ষতার পরিচয় বহন করে।’
এর আগে সোমবার রাতে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সেতু কর্তৃপক্ষের হয়ে রোববার রাত ১১টার দিকে জিডি করি।’
মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাওয়ার সময় সোমবার সন্ধ্যায় একটি রো রো ফেরি পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নামের ওই ফেরিতে থাকা গমভর্তি একটি ট্রাক পাশের প্রাইভেট কারের ওপর হেলে পড়ে। এতে প্রাইভেট কারের যাত্রীরা সামান্য আহত হন। প্রাইভেট কারটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ম্যানেজার শাফায়েত আহমেদ জানান, ধাক্কা লেগে ফেরিতে একটি ছিদ্র হয়। তা দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করলে ওয়েল্ডিং করে সঙ্গে সঙ্গে ছিদ্র বন্ধ করা হয়। ফেরিতে থাকা পরিবহনগুলো শিমুলিয়া ঘাটে নামিয়ে দেয়া হয় তখনই।
এর আগে গত ২৩ জুলাই নির্মাণাধীন সেতুটির ১৭ নম্বর পিলারের সঙ্গে ‘শাহজালাল’ নামের একটি রো রো ফেরির ধাক্কা লাগে। এতে ফেরিটির অন্তত ২০ যাত্রী আহত হন। ঘটনার পরপরই ফেরির ইনচার্জ ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আব্দুর রহমানকে বরখাস্ত করে বিআইডব্লিউটিসি।
এ ঘটনার দিন বিআইডব্লিউটিসি তদন্ত কমিটি করে। ২৫ জুলাই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে সেতুর সুরক্ষায় তিনটি সুপারিশ করা হয়। এর একটিতে পিলারগুলো প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।
এ ছাড়া বর্তমান যে শিমুলিয়া ফেরিঘাট আছে, সেই ঘাটটি সরিয়ে পুরোনো মাওয়া ঘাটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় সুপারিশে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, সে ক্ষেত্রে ফেরিগুলোকে সেতু ক্রস করতে হবে না। পুরোনো মাওয়া ঘাট থেকে ফেরি বাংলাবাজার চলে যাবে।
আর যদি সেটা সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে বাংলাবাজার ফেরিঘাটকে সরিয়ে মাঝিরঘাটে নিয়ে আসার সুপারিশ করে কমিটি। সে ক্ষেত্রেও ফেরিগুলোকে সেতু ক্রস করতে হবে না। সেতু ক্রস করতে না হলে দুর্ঘটনারও আশঙ্কা থাকবে না।
ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর পদ্মা সেতুর পিলারে রো রো ফেরি ‘শাহজালালের’ ধাক্কার ঘটনায় বিশদ তদন্তে ২৯ জুলাই আলাদা একটি কমিটি করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নৌসচিবের কাছে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। এই প্রতিবেদন জমার আগেই ফের পদ্মা সেতুর আরেক পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটল।