অপহরণ ও গুমের মামলা হওয়ার ছয় বছর পর ফিরে আসা বগুড়ার মো. শামীম নামের সেই যুবক ছিলেন ভারতে। তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য তিনি দুই বছর জেলও খেটেছেন।
সোমবার নিজ এলাকায় ঘোরাঘুরি করার সময় পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর শামীম নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন।
অথচ সাত বছর আগে তাকে অপহরণ ও গুমের মামলায় আজিজার রহমান নামের এক আসামি জেল খেটেছেন সাড়ে চার মাস। আদালতে নিয়মিত হাজিরাও দেন তিনি।
সোমবার সকালে বগুড়া সদর উপজেলার মানিকচক এলাকায় শামীমকে সাইকেল চালাতে দেখে পুলিশে খবর দেন এলাকার লোকজন। সদর থানার পুলিশ গিয়ে শামীমকে হেফাজতে নেয়।
সদর উপজেলার শাখারিয়া এলাকার শামীম পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য তিনি দুই বছর জেলও খেটেছেন।
শামীমকে অপহরণ মামলার আসামি আজিজার রহমানের বাড়ি সদর উপজেলার মানিকচক এলাকায়। তিনি শহরের বড়গোলা এলাকার একটি মুদির দোকানের কর্মচারী।
শামীমকে দেখতে পাওয়ার তথ্যে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আজিজার নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘শামীমের কাছ থেকে এক লাখ টাকা পাওনা ছিল আমার। সাত বছর আগে শামীমকে টাকার জন্য চাপ দিই। ওই সময়ই শামীম গ্রাম থেকে উধাও হয়ে যায়। পরে আমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন শামীমের মা ঝর্ণা বেগম।
‘হত্যা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। আমি এ মামলায় সাড়ে চার মাস জেল খেটেছি। এখনও নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছি।’
আজিজার বলেন, ‘সোমবার সকালে খবর পাই যে, মানিকচক এলাকায় শামীমকে বাইসাইকেল চালিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। আমার ছোট ভাই গিয়ে তাকে আটক করে। পরে পুলিশ তাকে (শামীম) থানায় নিয়ে যায়।’
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বলেন, ‘শামীম বর্তমানে থানা হেফাজতে রয়েছেন। হত্যা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
আজিজার ও পুলিশ প্রথমে হত্যা মামলার কথা জানালেও পরে আদালতে দেয়া অভিযোগপত্র থেকে জানা যায় মামলাটি অপহরণ ও গুমের।
এই মামলায় ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বগুড়ার আদালতে অভিযোগপত্র দেন তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিলাদুনন্নবী।
অপহরণের এই মামলায় আজিজারকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়। ওই মামলায় চার মাস জেল খাটার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি।
বগুড়া সদর থানায় কথা হয় শামীমের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘ওই সময় আজিজারের সঙ্গে আমার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরেই তারা আমাকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। পরে তাদের ধাওয়া খেয়ে আমি ভারতে পালিয়ে যাই। সেখানে অনুপ্রবেশের জন্য আমার সাজা হয়। দুই বছর সাজা শেষে ৩ বছর আগে আমি দেশে ফিরে আসি।’
এতদিন কেন প্রকাশ্যে আসেননি এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম বলেন, ‘আজিজারদের ভয়ে আমি এলাকায় যাইনি।’
আজিজারের বিরুদ্ধে করা মামলার তথ্য বলছে, ২০১৫ সালে ২ জানুয়ারি কর্নপুর মহল্লার আজিজার রহমান তার বন্ধু শাখারিয়া গ্রামের শামীমকে অপহরণ করে গুম করেছে। এমন অভিযোগ করে ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শামীমের মা ঝর্ণা বেগম বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন।
শামীম ফিরে আসার পর আজিজার বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি জড়িত ছিলাম না। অথচ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।’