কয়েকজন মডেলকে ঘিরে একটি অপরাধ চক্র গড়ে উঠেছে দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে কয়েক দিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা বলছে, এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বিত্তশালীদের ব্ল্যাকমেইল করছিল।
দেশের প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তিও এ চক্রটির ব্ল্যাকমেইলের শিকার তথ্য দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ বলছে, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার কয়েকজনের অভিযোগের সূত্র ধরে তারা চক্রের কয়েকজন সদস্যের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ আগস্ট রাজধানীর বারিধারা এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, উদ্ধার হয় মাদকদ্রব্য।
একই রাতে মোহম্মদপুরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন আরেক মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ, সেখান থেকেও উদ্ধার হয় মাদক। তাদের দেয়া তথ্যে পরদিন রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে র্যাব গ্রেপ্তার করে মিশু হাসান ও মাসুদুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তিকে, যাদের পিয়াসা ও মৌয়ের সহযোগী হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
সেদিন বিকেলেই রাজধানী বনানীর নিজ বাসা থেকে বিদেশি মদ, মাদক আইস ও এলএসডিসহ গ্রেপ্তার করা হয় আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনিকে।
ওই সন্ধ্যায় একই এলাকা থেকে মাদক ও পর্নোগ্রাফির সরঞ্জাম সংরক্ষণের অভিযোগে র্যাব গ্রেপ্তার করে চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার সবাই একই চক্রের সদস্য।
অপরাধ ঘটছিল যেভাবে
গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, মৌ ও পিয়াসাকে আটকের পর তাদের কাছ থেকেই সিন্ডিকেটের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। তারা জানান, নিজেদের বাসাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই চক্রের সদস্যরা ডিজে পার্টির নামে মদের আসর বসাতেন। সেখানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দাওয়াত দিয়ে আনা হতো। গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে সেসব ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত ধারণ করতেন মৌ, পিয়াসা, মিশু, জিসানরা। পরে মোটা অংকের টাকার জন্য তাদের ব্ল্যাকমেইল করা হতো।
গোয়েন্দা বিভাগের ওই কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, সবশেষ একজন ব্যাংক কর্মকর্তা এই চক্রের ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে অভিযোগ করেন সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর কাছে। এরপরই গ্রেপ্তার করা হয় মডেল পিয়াসা ও মৌকে।
পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, সিন্ডিকেটের সদস্য মিশু হাসান ও জিসানের সঙ্গে যোগসাজস ছিল প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের। রাজও অনেক উঠতি মডেলকে মিশু-জিসানের পার্টিতে পাঠাতেন এবং নিজেও যোগ দিতেন।
চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী হিসেবে পরীমনির উত্থান নজরুল ইসলাম রাজের হাত ধরে। তাই রাজের মাধ্যমেও পরীমনি বিভিন্ন পার্টিতে যোগ দিতেন। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে পরীমনিও নানা সময়ে প্রভাবশালীদের সঙ্গী হয়ে বিপুল অর্থ আয় করেছেন বলে দাবি করেন ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন নিউজবাংলাকে জানান, ‘একই সিন্ডিকেটের হয়ে মাঝে মধ্যেই কাজ করতেন পরীমনি ও পিয়াসা। তবে তাদের নিজেদের মধ্যে খুব একটা যোগাযোগ ছিল না। তাদের মাঝে মূল চেইনটা ছিল রাজ, মিশু ও জিসানের। মূলত বড় বড় পার্টির আয়োজন করত মিশু ও জিসান। সেখানে মৌ ও পিয়াসা অন্যান্য উঠতি মডেল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে আনতেন। আর রাজও মাঝে মধ্যে সেসব পার্টিতে যোগ দিতেন। সঙ্গে থাকতেন পরীমনিও।’
তবে পরীমনি সরাসরি ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কাজ করতেন না বলে তদন্তে জানা গেছে।
কমান্ডার আল মঈন পরীমনি সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা এখনও পরীমনির বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ভিকটিমের অভিযোগ পাইনি। তিনি উচ্চাভিলাষী ছিলেন, তার অর্থের প্রতি মোহ সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সান্নিধ্যে গিয়ে টাকা উপার্জন করতেন, পেতেন দামি দামি উপহার। তাদের সফরসঙ্গী হয়ে বিদেশ ভ্রমণ করতেন পরীমনি। আর তাকে এই পথ দেখিয়েছেন প্রযোজক রাজ।’