জামিন পেয়েছেন শাল্লা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও যুবলীগ নেতা অরিন্দম চৌধুরী অপু।
শাল্লার আমলি বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক শ্যামকান্ত সিনহা রোববার দুপুরে তার জামিন দেন।
অপুর ছোট ভাই আইনজীবী অমিতাভ চৌধুরী রাহুল নিউজবাংলাকে জানান, তারা বিকেলের মধ্যে অপুর কারামুক্তির চেষ্টা করছেন।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) ওপর হামলার অভিযোগে ১২ জুলাই রাতে গ্রেপ্তার করা হয় অপুকে। গ্রেপ্তারের পর অপুর নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেও মামলা করা হয়। রোববার দুই মামলাতেই জামিন পান তিনি।
অপুর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আনা সেই এসআই শাহ আলীকে ২ আগস্ট শাল্লা থানা থেকে বদলি করা হয়।
১২ জুলাই অপুকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই তার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনাটি সাজানো। হেফাজতের কারাবন্দি নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার দেয়ার জেরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। থানায় নিয়ে তাকে নির্যাতনও করা হয়।
গত ২৯ জুলাই সিলেটের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মফিজ উদ্দিন আহম্মদের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও করেন শাল্লার স্থানীয় লোকজন।
অপুর ভাই অমিতাভ চৌধুরী রাহুলের দাবি, হামলার অভিযোগ আনা এসআই শাহ আলী সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসা থেকে তার ভাইকে ফাঁসিয়েছেন।
তিনি জানান, গত ৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন নেতা মামুনুল হক এক নারীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে বেড়াতে গিয়ে জনরোষে পড়ার পরদিন তার স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়। ভিডিওটি প্রচার করে একাত্তর টিভি। ওই সংবাদের লিংক ফেসবুকে শেয়ার করেন অপু। এরপর স্থানীয় কয়েকজন তাকে হুমকি দেন।
আরও পড়ুন: মামুনুলের সমালোচনাই কাল হলো যুবলীগ নেতা অপুর?
এর আগে ১৭ মার্চ একই উপজেলার নোয়াগাঁওয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। এ কারণে ফেসবুকের হুমকির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ১৩ জনের নামে ১০ এপ্রিল শাল্লা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন অমিতাভ।
অমিতাভ বলেন, ‘সাধারণ ডায়েরি করার পরও থানা থেকে হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমার ভাইয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। তখন এসআই শাহ আলী আমার ভাইকে তার ফেসবুকে দেয়া লিংক মুছে ফেলার কথা বলেন ও সাধারণ ডায়েরি থেকে হেফাজতে ইসলামের প্রসঙ্গটি বাদ দিতে চাপ দেন।
মামুনুলের এই ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার দেন অপু
‘এসআই শাহ আলীর চাপ প্রয়োগের বিষয়টি ১৪ এপ্রিল আমরা পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানাই। পরে সার্কেল এএসপি বিষয়টি অনুসন্ধান করেন এবং এসআই শাহ আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয় বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
এসপির কাছে অভিযোগ দেয়ায় শাহ আলী অপুর ওপর ক্ষুব্ধ হন বলে অভিযোগ করেন অমিতাভ।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার জেরেই এখন আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে হামলার মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে অথচ ঘটনার রাতে তিনি বাসায় ছিলেন। বাসা থেকে তাকে থানায় একটি জরুরি কাজের কথা বলে ডেকে নেয়া হয়। এরপর সেখানে তাকে সারা রাত মারধর করা হয়।
‘ভোররাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে একজন ফোন দিয়ে আমাদের এ তথ্য জানান। এরপর আমরা হামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে পারি।’
অপুর নামে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, সোমবার মধ্যরাতে ডিউটি শেষ করে থানা থেকে বের হয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন এসআই শাহ আলী। পথে অপুর নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক তার ওপর হামলা করেন। এতে গুরুতর আহত হন শাহ আলী।
১৭ জুলাই সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিডি করার পর চাপ প্রয়োগের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ওই সময়ই শেষ হয়ে গেছে। যে এসআইকে তারা অভিযুক্ত করেছিলেন তাকেই বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিই। তিনি প্রতিবেদন জমাও দেন। ফলে এই ঘটনার জেরে এখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়।’
তিনি জানান, অপুর বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক মামলা হয়েছে থানায়। এর মধ্যে একটি পুলিশকে হেনস্তার মামলা। ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন কিছু নয়।