শরীয়তপুরে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা লঙ্ঘন করে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে স্লোগান দেয়ার অভিযোগ ওঠা পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার রাত ১২টার দিকে শরীয়তপুর সদরের চৌরঙ্গী মোড়ে মোমবাতি প্রজ্বালন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন ওসি আক্তার হোসেন।
ওই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তার রাজনৈতিক স্লোগান, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মিষ্টি খাওয়ার ভিডিও ছড়িয়েছে ফেসবুকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ওসি বলেছেন, ‘শুভ শুভ শুভদিন, শেখ কামালের জন্মদিন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। আমরা সবাই মুজিব সেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা।’
তার এ আচরণ সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার লঙ্ঘন হলেও দুই দিনেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতেও রাজি হননি জেলা পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান।
জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শুধু জানিয়েছেন, বিষয়টি তারা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। সেখান থেকে নির্দেশনা এলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওসির দাবি অবশ্য, তিনি দলীয় কর্মসূচিতে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অংশ নিয়েছেন। এটাকে অন্যভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।
পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন ওসি আক্তার হোসেনশরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, সদর উপজেলার সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, পৌরসভা কমিটির সভাপতি এম এম জাহাঙ্গীরসহ আরও অনেকে।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা পরে নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘শেখ কামালের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ওসি অংশ নিয়েছিলেন। প্রথমে আমি স্লোগান দিয়েছিলাম। আমার পরে ওসি স্লোগান দিয়েছেন।’
পালং মডেল থানার ওসি আক্তার হোসেন দাবি করেন, ‘ওইটা আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে দিয়েছি। আমি রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে দিইনি। এটা একটা জাতীয় প্রোগ্রাম ছিল। এখানে দেয়া যায়। এটা অন্যভাবে নেবেন না, ভাই।’
এ ঘটনায় সমালোচনা শুরু হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সভা-সেমিনারে কোনো পুলিশ সদস্য এভাবে অংশ নিতে পারেন না। এটা সরকারি কর্মচারী বিধিমালা (আচরণ) ১৯৭৯-এর পরিপন্থি।’
পালং মডেল থানার ওসি আক্তার হোসেনসরকারি কর্মচারী বিধিমালা (আচরণ) ১৯৭৯-এর বিধি-২৫-এ (রাজনৈতিক ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ) বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে পারবে না। বাংলাদেশ এবং বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বা কোনো প্রকারেই সহযোগিতা করতে পারবে না।
ওসির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা তখন নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘একজন পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্যের করণীয় এবং সেই করণীয় পদ্ধতি ও উপায় সুনির্দিষ্টভাবে আইনে উল্লেখ আছে। মৌলিক প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে নানা সময় পুলিশের সব সদস্যকে সে বিষয়ে জানানো হয়। সুনির্দিষ্ট তথ্য ও অভিযোগের ক্ষেত্রে যেকোনো বিচ্যুতির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।’