চলতি বছরের জুনের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ করে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনি। এর দুই মাস না যেতেই দেশ-বিদেশে নতুন করে আলোচনায় নায়িকা। এবারের বিষয় রাজধানীর বনানীতে পরীর বাসায় অভিযান ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার।
এসবের পাশাপাশি আলোচনায় উঠে আসছে পরীমনির ক্যারিয়ার, বেড়ে ওঠার বিষয়টি। এমন বাস্তবতায় নিউজবাংলা কথা বলেছে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার সিংহখালী গ্রামে পরীর স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে।
তারা জানিয়েছেন, পরীমনির শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায়। তার বাবা মনিরুল ইসলামের বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার সালাবাদ ইউনিয়নের বাকা গ্রামে।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ভগীরথপুর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন মনিরুল। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি বিয়ে করেন ভান্ডারিয়া উপজেলার সিংহখালী গ্রামের সালমা সুলতানাকে।
তিন বছর বয়সে মা-বাবা দুজনকেই হারান পরীমনি। এরপর নানাবাড়িতেই বেড়ে ওঠেন তিনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন কেটেছে সেখানেই।
মঠবাড়িয়ার ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক আক্কাস মৃধা বলেন, ‘পরীমনি আমার ছাত্রী। স্থানীয় গাজী বাড়ি সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে ফাইভে স্কলারশিপ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আমাদের স্কুলে মাধ্যমিকে ভর্তি হয়।
‘লেখাপড়ায় খুব মেধাবী পরী সায়েন্স নিয়ে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করে। সে সংস্কৃতিমনা, লাজুক ও মিশুক টাইপের মেয়ে ছিল। স্কুল ও উপজেলাভিত্তিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ, গান ও অভিনয়ে অংশ নিত সে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পারিবারিকভাবে ২০১০ সালে স্থানীয় এক ব্যাংকারের ছেলে ইসমাইল হোসেন জমাদ্দারের সঙ্গে বিয়ে হয় পরীর। ভোলা শহরে দুই বছর সংসার করার পর বনিবনা না হওয়ায় তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।’
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার সিংহখালী গ্রামে নানাবাড়িতে বেড়ে উঠেছে পরীমনি। ছবি: নিউজবাংলাসিংহখালী গ্রামে পরীমনির নানাবাড়ির পাশের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি উচ্চাভিলাষী ছিলেন। র্যাবের হাতে তার আটক হওয়ার বিষয়টি দৃষ্টিকটু।
অন্যদিকে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি পরীর স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন পরীমনির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। এ কারণেই র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন তিনি।
সাবেক স্বামী দাবি করা সৌরভের ভাষ্য
বনানীতে বুধবারের অভিযানে পরীমনি আটক হওয়ার পর এ নিয়ে মুখ খুলেছেন তার সাবেক স্বামী দাবিদার ফেরদৌস কবীর সৌরভ। তার বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলায়।
তিনি জানান, ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল তার সঙ্গে বিয়ে হয় পরীমনির। তিনি ফুটবলার ছিলেন। ওই বছর এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে ঢাকার একটি ক্লাবে খেলার ডাক পান। তখন স্ত্রীকে নিয়ে পাড়ি জমান রাজধানীতে।
সৌরভ জানান, ঢাকায় এসে বনশ্রীতে বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রীকে মিরপুরের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। সেখানে বসবাসের একপর্যায়ে শোবিজ অঙ্গনের এক ব্যক্তির নজরে পড়েন পরীমনি। ওই ব্যক্তিই তাকে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখান।
তিনি আরও জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শামসুন্নাহার স্মৃতি নাম পাল্টে হয়ে যান পরীমনি। জীবনযাপন পাল্টে যাওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই পরীর সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়।
২০১৬ সালের দিকে ফেসবুকে সাবেক স্বামী দাবিদার সৌরভের সঙ্গে পরীমনির কিছু ছবি ভাইরাল হয়। ছবি: সংগৃহীতশোবিজে যুক্ত সেই ব্যক্তিকে পরীমনি বিয়ে করেছেন বলে জানতে পারেন সৌরভ। যদিও তার দাবি, এখনও তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি।
২০১৫ সালের পর সৌরভ ঢাকা ছেড়ে কেশবপুরে ফিরে যান। বর্তমানে তিনি কেশবপুরেই আছেন।
২০১৬ সালের দিকে ফেসবুকে সৌরভ ও পরীমনির কিছু ছবি ভাইরাল হয়। সেগুলোতে সৌরভের সঙ্গে পরীমনিকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা যায়।
সে সময় একটি কাবিননামার ছবিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে ওই বিয়ের কথা অস্বীকার করেছিলেন পরীমনি।
২০২০ সালের ১০ মার্চ পরীমনি বিয়ে করেন কামরুজ্জামান রনি নামে এক সহকারী পরিচালককে। সেই বিয়েতে মাত্র তিন টাকা কাবিননামা করেছিলেন তারা।
বিয়ের পর পরীমনি বলেছিলেন, ‘কাবিন কোনো বিষয়ই না। পারস্পরিক সম্পর্কটাই আসল।’
তবে কিছুদিন পরই পরী জানান, তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। আর বিয়েটাও সিরিয়াসলি করেননি।
একটি বাগদানের গল্পও আছে পরীমনির। ঘটা করে সাংবাদিক তামিম হাসানের সঙ্গে তার বাগদান হয়।
পরীমনির বনানীর বাসায় বুধবার রাতে হঠাৎ অভিযান চালায় র্যাব। অভিযান শেষে তাকে আটক করে র্যাবের সদর দপ্তরে নিয়ে আসে বাহিনীটি। ওই সময় তার বাসা থেকে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও মাদক।
পরীমনিকে বৃহস্পতিবার মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয়।