বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চার মামলায় আরও ১৪ দিনের রিমান্ডে হেলেনা

  •    
  • ৩ আগস্ট, ২০২১ ১৮:০০

শুনানিতে হেলেনার আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হেলেনা জীবনে কখনও কোনো অন্যায় করেন নাই। তিনি ব্যবসা করে সৎ উপায়ে দেশের জন্য অবদান রেখেছেন। রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতি অনুগত থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তিনি একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়েছেন।’

পল্লবী থানার দুই মামলায় আট দিনের রিমান্ডের পর এবার আলোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশান থানার দুই মামলায় তিন দিন করে আরও ছয় দিন পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছে আদালত। এ নিয়ে চার মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ড দেয়া হলো হেলেনাকে।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার মুখ্যমহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম নিভানা খায়ের জেসী এ আদেশ দেন।

বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর।

এদিন আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ শাহানুর রহমান হেলেনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় দশ দিনের হেফাজতে নিতে আবেদন করেন। একই সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা আরেক মামলায় হেলেনাকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ পাঁচ দিনের হেফাজতে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ।

বিচারক ওই আবেদন গ্রহণ করে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।

মঙ্গলবার গুলশান থানায় পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিন দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হেলেনাকে বিকেলে আদালতে হাজির করে পুলিশ।

রোববার গুলশান থানায় ওই মামলাটি করা হয়। শনিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদনটি আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় জমা দেন।

হেলেনা জাহাঙ্গীর গুলশান থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে ছিলেন। একারণে রিমান্ড থেকে ফেরার পর তাকে আদালতে হাজির করা হলে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফের দশ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয়।

আসামি পক্ষে আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, ‘সাজানো ঘটনায় আসামিকে বারবার হয়রানির চেষ্টা হচ্ছে। তিনি একজন অসুস্থ মানুষ। তার ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেয়ে এখন ২৪ এ দাঁড়িয়েছে। তাই তার রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিনের আদেশ প্রার্থনা করছি। রিমান্ডের কোনো কারণ নাই ২৫, ২৯, ৩১ ধারা জামিনযোগ্য। যে মামলা করেছে তার মানহানি হয় নাই। এটা সুনির্দিষ্ট করে কোথাও বলা নাই।’

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই তিনটি ধারার কোনোটি রিমান্ডযোগ্য নয়। এর পরিষ্কার রেফারেন্স আছে ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায়। রিমান্ড হবে না এ মামলায়, আমি ন্যায়বিচারের স্বার্থে রিমান্ড বাতিল চাই।’

মাদকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট পরিমাণ মাদক লাইসেন্স থাকলে রাখা যায়।’

তখন বিচারক বলেন, ‘মদের লাইসেন্সটি কি আপনার কাছে আছে?’

আইনজীবী বলেন, ‘লাইসেন্সটি সঙ্গে নাই। তিনি একটি মহলের প্রতিহিংসার শিকার। তিনি একজন ভিভিআইপি ও সিআইপি। বিষয়টি বিবেচনা করে জামিনের আবেদন প্রার্থনা করছি। এ মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে পর্যাপ্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায় নাই।

‘তিনি একজন ব্যবসায়ী। দেশের প্রতি উনার অনেক অবদান আছে। তাই তার অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে জামিনের আবেদন করছি এবং রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা করছি। হেলেনা জাহাঙ্গীর কোনো মাদক সেবন বা বিক্রি করেন না। তিনি একজন সিআইপি ও নারী উদ্যোক্তা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকেও পুরস্কারপ্রাপ্ত। তাই দয়া করে রিমান্ড বাতিলপূর্বক যে কোনো শর্তে তার জামিন দেয়া হোক।’

হেলেনা জাহাঙ্গীরের আইনজীবী আরও বলেন, ‘তিনি জীবনে কখনও কোনো অন্যায় করেন নাই। তিনি ব্যবসা করে সৎ উপায়ে দেশের জন্য অবদান রেখেছেন। রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতি অনুগত থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তিনি একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়েছেন।’

মহানগর আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল রিমান্ডের আবেদন ও জামিনের বিরোধিতা করেন।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, আসামির নিকট থেকে অনেক কিছু বিষয় জানার আছে। তিনি রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী অনেক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত। অনেক নেতা, মন্ত্রী, এমপিকে তিনি হেয় প্রতিপন্ন করে ফেসবুক লাইভে এসে আপত্তিকর ভিডিও ও বক্তব্য প্রচার করেছেন। ফেসবুকের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তুলছেন। তার এই উদ্দেশ্যের বিষয়ে, ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানা প্রয়োজন, তাই তাকে পুনারায় দশ দিনের রিমান্ড দেয়া হোক।

এসময় গুলশান থানার মাদক মামলায়ও হেলেনার পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।

শুক্রবার হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশান থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের হেফাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডে অবস্থিত হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

অভিযান শেষে সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় আমরা অভিযান চালিয়েছি। তার বাসা থেকে আমরা বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, বিদেশি মুদ্রা, চাকু ও হরিণের চামড়া জব্দ করেছি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় হেলেনার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করে তার পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

এছাড়া হেলেনার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনসহ চারটি ধারায় আরেকটি মামলা হয়েছে।

গৃহবধূ থেকে ব্যবসায়ী হয়ে সিআইপির (কমার্শিয়ালি ইমপর্টেন্ট পারসন) স্বীকৃতি পাওয়া এই ব্যবসায়ী সম্প্রতি তুমুল আলোচিত হয়ে ওঠেন ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের প্রচার চালাতে গিয়ে। আওয়ামী লীগের এই নামে কোনো সংগঠন নেই। তিনি এই সংগঠনকে সামনে নিয়ে আসার পর ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন।

এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের পদ হারান হেলেনা। ক্ষমতাসীন দলের মহিলাবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্যপদ ছাড়াও কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে। ওই ঘটনায় পিছুটান দেন হেলেনা। বলেন, তিনি ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে এই সংগঠনের কেউ না। তাকে সম্প্রতি সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।

র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১-এর অভিযানে ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশান-২ এলাকার ৩৬ নং রোডের ৫ নং বাড়ি ‘জেনেটিক রিচমন্ড’-এ অভিযান পরিচালনার পর হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়। অভিযানে জব্দ করা হয় ১৯ বোতল বিদেশি মদ, ১টি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, ১টি হরিণের চামড়া, ২টি মোবাইল ফোন, ১৯টি চেকবই ও বিদেশি মুদ্রা, ২টি ওয়াকিটকি সেট এবং জুয়া (ক্যাসিনো) খেলার সরঞ্জাম ৪৫৬টি চিপস। পরবর্তী সময়ে মধ্যরাতে তার জয়যাত্রা টেলিভিশন স্টেশনেও অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর