ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের বিতর্কিত নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে গ্রেপ্তার ঝুমন দাস আপনের এবারও জামিন হয়নি। এ নিয়ে পাঁচবার সুনামগঞ্জের শাল্লার এই যুবকের জামিন আবেদন নাকচ হলো।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার মঙ্গলবার সকালে তার জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঝুমনের আইনজীবী দেবাংশু শেখর দাস।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার ভার্চুয়াল আদালতে ঝুমনের জামিন আবেদনের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সামসুল আবেদিন আপত্তি জানান। তিনি বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন নাকচ হয়েছে। তাই এই আদালতে জামিন দেয়া ঠিক হবে না।
নিউজবাংলাকে মুঠোফোনে সামসুল বলেন, ‘যেহেতু মামলাটি জামিন অযোগ্য ধারায় এবং এখনও তদন্তাধীন, সেহেতু আমি জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেছি।’
জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত রোববার ঝুমন দাসের জামিন শুনানির দিন ঠিক করা থাকলেও বিচারক ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার উপস্থিত না থাকায় শুনানির দিন পিছিয়ে মঙ্গলবার করা হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে কারাবন্দি ঝুমন।
গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শানে রিসালাত সম্মেলন নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন।
ঝুমনের স্ত্রী ও সন্তান
এই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন দিরাইয়ের পার্শ্ববর্তী উপজেলা শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস আপন। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন।
মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন তার অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পরদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি, মন্দির। ঝুমনের স্ত্রী সুইটিকে পিটিয়ে আহত করা হয়।
এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।
শাল্লা হিন্দু গ্রামে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে হেফাজত সমর্থকরা
শাল্লায় হামলার ঘটনায় শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম, স্থানীয় হাবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ও ঝুমন দাসের মা নিভা রানী তিনটি মামলা করেন। তিন মামলায় প্রায় ৩ হাজার আসামি। পুলিশ নানা সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু তারা সবাই এখন জামিনে।
ইউপি চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদারের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয় দিরাই উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীনকে। তার নেতৃত্বেই হামলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। গ্রেপ্তারের পর এই মামলার তিন আসামি স্বাধীনের বিরুদ্ধে আদালতে স্বীকারোক্তিও দেন।
গত ২১ জুন সুনামগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে স্বাধীনও জামিনে মুক্তি পান।
শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে হামলার পরের ছবি
এদিকে, যাকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটেছে, হেফাজতের সেই নেতা মামুনুল হক নানা অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে।
অথচ ঝুমন জামিন পাননি।
তার জামিনের জন্য পরপর দুইবার হাকিম আদালতে আবেদন করে পরিবার। দুইবারই তা খারিজ হয়। এরপর গত ১৬ মে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করা হয়। সেখানে জামিন না পেয়ে পরিবার যায় উচ্চ আদালতে। উচ্চ আদালতও ঝুমনকে জামিন দেয়নি।