বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছিলেন জামিলা চৌধুরী। গত বুধবার বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার লন্ডন ফেরার কথা ছিল। টিকিট কাটা, লন্ডনে কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিং করাসহ সব প্রস্তুতিও শেষ করেছিলেন।
নির্ধারিত দিনে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান সিলেটের খাদিম এলাকার ওই নারী। তবে যুক্তরাজ্য যাওয়া হয়নি তার, বিমানবন্দরেই আটকে দেয়া হয় তাকে।
জামিলার অভিযোগ, বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তারা হয়রানি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন তার সঙ্গে।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা ঘুষ দাবি করেছিলেন জানিয়ে জামিলার অভিযোগ, কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণেই তিনি যুক্তরাজ্য ফিরতে পারেননি।
তবে বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের দাবি, জামিলা চৌধুরী নির্ধারিত ওজনের চেয়ে অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে বিমানে উঠতে চেয়েছিলেন। এজন্য ফি চাওয়া হলে তিনি দিতে রাজি হননি। এ নিয়ে বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
প্রবাসী নারীকে হয়রানির অভিযোগ ওঠায় শনিবার অবশ্য বিমান বাংলাদেশের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে জামিলার বাসায় যান বিমানের কর্মকর্তারা। বুধবারের ঘটনার জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করে ৪ আগস্ট বিমানের পরবর্তী ফ্লাইটে তাকে যুক্তরাজ্য পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
বিমান বাংলাদেশ উপ-মহাব্যবস্থাপক জনসংযোগ তাহেরা খন্দকারের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্টেশন ব্যবস্থাপক চৌধুরী ওমর হায়াত শনিবার বিকেলে নিউজবাংলাকে জানান, প্রবাসী এক নারীকে হয়রানির অভিযোগ ওঠায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে এবং দুজনকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। তবে ওই দুই কর্মকতার নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদেরকে ঢাকায় গিয়ে রিপোর্ট করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে আজকে তারা ঢাকায় যেতে পারেননি।’
রোববার এ নিয়ে তদন্ত করতে বিমানের জিএম পদবির একজন কর্মকর্তা সেখানে যাবেন বলেও জানান তিনি।
এর আগে ওসমানী বিমানবন্দরে কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার চিত্র নিজের মোবাইলে ধারণ করেছিলেন জামিলা। শুক্রবার তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এরপরই টনক নড়ে বিমান কর্তৃপক্ষের।
জামিলা জানান, সিলেট থেকে লন্ডন সরাসরি ফ্লাইটের বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১ এর যাত্রী ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার লাগেজে অতিরিক্ত মালামাল ছিল। এ কারণে আমার কাছে অনৈতিকভাবে টাকা দাবি করেন এক কর্মকর্তা। আমি তা দিতে অপারগতা জানাই এবং বলি অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ ফিরিয়ে দিয়ে শুধু একটি লাগেজ নিয়ে আমাকে বোর্ডিং পাস দেয়ার জন্য।
‘কিন্তু সেই কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে আমার উপর পাসপোর্ট ছুড়ে মারেন এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। আমাকে বোর্ডিং পাস না দিয়েই লাইন থেকে বের করে দেন।’
জমিলার অভিযোগ, তিনি উপস্থিত অন্য কর্মকর্তাদেরও অনুরোধ করেন, তবে কেউ তাকে সাহায্য করেননি। বিমানবন্দরে অভিযোগ জানাতে চাইলেও কেউ নেয়নি।
বিমানের কর্মকর্তা ওমর হায়াত এ বিষয়ে বলেন, ‘ওই যাত্রীর সঙ্গে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ৪৪ কেজি মালামাল বেশি ছিল। প্রতি কেজি ২ হাজার ৬১১ টাকা হিসাবে এক লাখ টাকার উপরে পরিশোধ করার কথা তার।
‘কিন্তু তিনি প্রথমে ওভার ওয়েটের মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হননি। পরে যখন তিনি অতিরিক্ত লাগেজ ছেড়ে যেতে রাজি হন তখন কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে।’
ওমর হায়াতের দাবি, নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের কাউন্টার বন্ধ করতে হয়। কিন্তু ওই যাত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার লাগেজের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তাই তাকে রেখেই বিমান ছাড়তে হয়েছে।
তারপরও হয়রানির অভিযোগ করায় তারা জামিলার বাসায় গিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানান তিনি।
বিমান কর্তৃপক্ষের এ অবস্থান সম্পর্কে শনিবার জামিলা বলেন, ‘এখন তারা ক্ষমা চাচ্ছেন। ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ক্ষতিপূরণ দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমার চোখের জলের কী ক্ষতিপূরণ দেবেন?
‘আমার বাচ্চা ছেলে লন্ডনে আছে। সে অনেকদিন ধরে আমাকে দেখতে পাচ্ছে না। ফোন করে কান্নাকাটি করছে। এসবের কী ক্ষতিপূরণ হবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেশে রেমিটেন্স পাঠাই। দেশের টানে এখানে আসি। আমরা তো কোনো সুবিধা চাই না। কিন্তু হয়রানি ও অপমান করা হবে কেন?’