বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উল্টো হেলেনাকেই টাকা দিতেন জয়যাত্রার কর্মীরা: র‍্যাব

  •    
  • ৩১ জুলাই, ২০২১ ১৯:১৬

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সাধারণত দেশ বিদেশের প্রতিনিধিরা প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পেয়ে থাকেন। এখানে আমরা বিপরীত চিত্র পেয়েছি। যারা জয়যাত্রা টেলিভিশনের আইডি কার্ড ব্যবহার করতেন, তাদের কাছ থেকে তিনি নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করতেন।’

ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন আইপি টিভি জয়যাত্রা কার্যক্রম শুরু করে ২০১৮ সালে। টিভিতে কর্মরতদের বেতন দেয়ার বদলে উল্টো তাদের কাছ থেকেই চাঁদা নিতেন তিনি। এর বিনিময়ে জয়যাত্রা আইপিটিভির আইডি কার্ড ব্যবহার করতে পারত চাঁদাদাতারা।

শনিবার র‍্যাব সদর দপ্তরে গণমাধ্যমের সামনে এমন তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘জয়যাত্রায় ৭০-৮০ জনকে চাকরি দিয়েছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। পরে অধিকাংশকেই বেতন ছাড়াই চাকরিচ্যুত করেছেন তিনি। বর্তমানে ২০-২৫ জন রয়েছেন। বাকিদের চাকরিচ্যুত করেছেন।’

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা প্রচুর পরিমাণে জমা বই বা রশিদ পেয়েছি। দেশে বিদেশে তিনি সাংবাদিক নিয়োগ করেছেন। সাধারণত দেশ বিদেশের প্রতিনিধিরা প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পেয়ে থাকেন। এখানে আমরা বিপরীত চিত্র পেয়েছি। যারা জয়যাত্রা টেলিভিশনের আইডি কার্ড ব্যবহার করতেন, তাদের কাছ থেকে তিনি নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করতেন।’

এছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীর দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন লোকজনকে ব্ল্যাকমেইল করে নিজের জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেন বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

তিনি বলেন, ‘উনি জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের নামে দেশে বিদেশের বিভিন্ন উৎস থেকে টাকা সংগ্রহ করতেন। যদিও তিনি বলেছেন দাতারা খুশি হয়ে দিতেন। তবে আমরা দেখেছি, টাকাটা সংগ্রহ করতেন অনেককে বিপদে ফেলে বা ব্ল্যাকমেইল করে।’

বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র‍্যাব। এসময় তার বাসা থেকে মদ, বন্যপ্রাণীর চামড়া, ওয়াকিটকি, ক্যাসিনো খেলার সামগ্রীসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে সংস্থাটি। এছাড়া মিরপুরে জয়যাত্রা টেলিভিশনের অফিসে অভিযানে স্যাটেলাইট টিভি চালানোর সরঞ্জাম, বিভিন্ন রশিদসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার রাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুটি ও পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়। গুলশান থানার দুই মামলায় হেলেনা জাহাঙ্গীরকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে বলে জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

২০১২ সালে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু করেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। দাতাদের কাছ থেকে টাকা এনে নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তিনি এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করতেন বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘একজন ব্যক্তিতে থেমে থাকেননি। উনি ফেসবুক পোস্টে মিথ্যাচার করেছেন, পরে আমাদের বলেছেন, না বুঝে দিয়েছেন। যাকে যখন প্রয়োজন হয়েছে, তাকে তখন ঘায়েল করেছেন। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ছবি তুলে ছড়িয়েছেন নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য।’

উনার লক্ষ্য কী ছিল? এমন প্রশ্নে র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘উনি বলেছেন সম্প্রতি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। উনি নাকি সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে থাকতে চেয়েছিলেন। দেশের সব মানুষ চিনবে এটা চাওয়া ছিল।’

র‍্যাব জানিয়েছে, একটি শক্তিশালী সাইবার টিম মেনটেইন করতেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এরা বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হেলেনার পক্ষে প্রচারণা চালাতেন।

র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে যারা বিভিন্ন সময়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে তাদেরকেও সাইবার গ্রুপটি দিয়ে ঘায়েল করা ও অপমান করা হত। এই টিমের ১৫-২০ জনের নাম পেয়েছে র‍্যাব। তাদেরও পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সম্প্রতি নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠন। এটির কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নাম আসে হেলেনা জাহাঙ্গীরের। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাহবুব মনিরকে। তাদের নাম সম্বলিত পোস্টার ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

পোস্টারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। সংগঠনটির দাবি, দুই-তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।

এ নিয়ে গত শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুক্রবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে চাকরিজীবী লীগ গঠনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন হেলেনা।

তিনি লিখেছেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় আর সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার প্রত্যাশায় বাংলাদেশের আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ।’

পরে অবশ্য সংগঠনটির সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন হেলেনা। বলেছেন, তিনি ওই পদ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেননি।

চাকরিজীবী লীগ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গত শনিবার আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বাদ দেয়া হয় হেলেনাকে। আর তাকে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদ থেকে আরও আগেই বাদ দেয়া হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।

চাকরিজীবী লীগের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর আওয়ামী লীগের নামের সঙ্গে মিল রেখে সংগঠন পরিচালনা করছে এমন অন্তত অর্ধশত সংগঠনের নাম আসে।

এদের কেউ কেউ তাদের দলীয় প্যাডে ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, যেটি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খুব শিগগির এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর