ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বৃহস্পতিবার আটকের পর শুক্রবার তার বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে র্যাব। ওই মামলায় আদালতের মঞ্জুর করা তিন দিনের রিমান্ডে আছেন তিনি।
শুক্রবার হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুই থানায় মোট তিনটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান থানায় দুটি মামলা করে র্যাব। ওই দুটি মামলায় মিথ্যা তথ্য ছড়ানোসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করাসহ বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে অভিযোগ
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি করা হয়। র্যাব ১ এর সিপিও মো. মজিবর রহমান বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/ ৩১ ধারায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। গুলশান থানায় করা মামলা নম্বর ২৬।
এজাহারে মজিবর রহমান জানান, তিনি সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন যে হেলেনা জাহাঙ্গীর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী, বিভিন্ন সংস্থাকে কটূক্তি করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করাসহ মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর কাজ করছিলেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন সন্দেহে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি সাপেক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার গুলশানের বাসায় অভিযান চালান মজিবর। এসময় হেলেনা জাহাঙ্গীরের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ফোন দুটির মাধ্যমে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট যাচাই করে সাইবার পেট্রোলিংয়ে পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়।
এহাজারে তিনি জানান, এসব প্রমাণের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করা হয়। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ শাহানুর রহমানকে।
অপর মামলায় হেলেনার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ বিদেশি মদ, হরিণ ও ক্যাঙ্গারুর চামড়া, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস জব্দ করেছিল র্যাব। এ কারণে গুলশান থানায় হেলেনার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন র্যাব ১ এর সিপিও মজিবর রহমান।
২৭ নম্বর মামলাটিতে জব্দ হওয়া আলামতের ক্যাটাগরি অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয় হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।
এজাহারে মজিবর রহমান হেলেনার বাসায় তার দলের পরিচালিত অভিযানের কথা উল্লেখ করে জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় তল্লাশি করে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, একটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, একটি হরিণের চামড়া ও দুটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, ক্যাঙ্গারুর চামড়াটি হেলেনা বিদেশ থেকে এনেছেন। অন্যদিকে হরিণের চামড়াটি হেলেনা লাইসেন্স ছাড়া দেশ থেকে কিনেছেন। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়াই ওয়াকিটকির দুটি সেট নিজের কাছে ব্যবহার করতেন হেলেনা।
গুলশান থানার দ্বিতীয় মামলাটিতে মদের জন্য ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) ধারা, ক্যাঙ্গারুর চামড়ার জন্য ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ বি এর (১) ধারা, হরিণের চামড়ার জন্য ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের ৩৪ (খ) ধারা এবং ওয়াকিটকির জন্য ২০০১ সালের বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫৫ (৭) ধারায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
সম্প্রতি নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠন। এটির কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নাম আসে হেলেনা জাহাঙ্গীরের। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাহবুব মনিরকে। তাদের নাম সম্বলিত পোস্টার ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
পোস্টারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। সংগঠনটির দাবি, দুই-তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ নিয়ে গত শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুক্রবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে চাকরিজীবী লীগ গঠনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন হেলেনা।
তিনি লিখেছেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় আর সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার প্রত্যাশায় বাংলাদেশের আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ।’
পরে অবশ্য সংগঠনটির সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন হেলেনা। বলেছেন, তিনি ওই পদ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেননি।
চাকরিজীবী লীগ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গত শনিবার আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বাদ দেয়া হয় হেলেনাকে। আর তাকে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদ থেকে আরও আগেই বাদ দেয়া হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
চাকরিজীবী লীগের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর আওয়ামী লীগের নামের সঙ্গে মিল রেখে সংগঠন পরিচালনা করছে এমন অন্তত অর্ধশত সংগঠনের নাম আসে।
এদের কেউ কেউ তাদের দলীয় প্যাডে ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, যেটি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খুব শিগগির এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।