করোনার তিন ডোজ টিকা নেয়ার অভিযোগ তোলা ওমর ফারুককে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ লুকোচুরি বন্ধ করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তার বোনেরা।
তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ফারুককে নিজেদের কাছে রেখে কেন অস্বীকার করা হলো।
কয়েক দফা নাকচের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএসএমএমইউ স্বীকার করে ওমর ফারুক তাদের পর্যবেক্ষণে আছে।
নিউজবাংলাকে ফারুকের বোন ফারজানা আক্তার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর পেয়েছি আমার ভাই সেখানে ভর্তি রয়েছে। সেখানে আমার মা ও চচারাও আছেন। বাবাও গেছেন। আমরাও ভাইয়ের কাছে যাওয়ার প্রস্ততি নিয়েছি।’
প্রবাসী অ্যাপ থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করে ২৬ জুলাই সকালে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে টিকা নেয়ার জন্য যান ফারুক। সেখানে প্রথমে একটি বুথে তাকে এক ডোজ টিকা দেয়া হয়। ফারুক ওই বুথের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পরবর্তী করণীয় জানতে চাইলে তাকে সামনের বুথের দিকে যেতে বলা হয়। পরের বুথে গেলে তাকে আবার টিকা দেয়া হয়, এরপর সামনের আরেকটি বুথ থেকে দেয়া হয় টিকার আরেকটি ডোজ।
এ ঘটনা নিয়ে বেসরকারি একটি টেলিভিশনে প্রতিবেদন প্রচারের পর ব্যাপক আলোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এই আলোচনার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার বিকেলে নিউজবাংলা বলেন, ‘ওমর ফারুক সুস্থ আছেন এবং তিনি সাত দিন পর্যবেক্ষণে থাকবেন।’
তিন ডোজ টিকা নেয়ার অভিযোগ তোলা ওমর ফারুক
তবে এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্য তার বক্তব্য পরিবর্তন করে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেন, একজনকে তিনবার টিকা দেয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওমর ফারুক নামে কেউ তাদের পর্যবেক্ষণেও নেই।
পরের দিনও বিষয়টিকে অস্বীকার করে বিএসএমএমইউ। তবে ওমর ফারুকের পরিবার দাবি করে, বুধবার দুপুরে ফারুককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ফারুককে নিজেদের কাছে রেখে কেন অস্বীকার করা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফারুকের আরেক বোন লাকি। তিনি বলেন, ‘ভাইয়ের সন্ধান পেয়েছি। তারা আমার ভাইকে ফেরত দিক, তাতেই আমাদের শান্তি। কারণ তারা ভাইকে চিকিৎসার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে গেল। এরপর তারা পুরোপুরি অস্বীকার করল। আমরা ভয়ানক দুশ্চিন্তায় ছিলাম।’
লাকি অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত তিনবার ফোন করে ফারুক তাদের জানিয়েছেন তিনি হাসপাতলে ভর্তি আছেন। কিন্তু তার মাসহ পরিবারের লোকজন হাসপাতালে যাওয়ার পর সেখানকার লোকজন তাদের ভাইকে খুঁজে পেতে সহযোগিতা করেননি। পরে তার মাসহ অন্যরা হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করে ১৬ তলার একটি কক্ষে পেয়েছেন।’
তবে ওমর ফারুককে হাসপাতালে নেয়ার বিষয়ে এখনও কিছুই জানেন না নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ আহম্মেদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, আমাদের সঙ্গে ওমর ফারুকের ব্যাপারে শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কোনো যোগাযোগ করেনি। তারা ওমর ফারুকে কীভাবে নিয়েছে কারা এসেছে, সে বিষয়ে আমাদের জানা নেই।’
ওমর ফারুকের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভূঁইঘরে। তার চার বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। বাবা জামাল হোসেন প্রধান পেশায় অটোরিকশাচালক। ফারুকরা তার চাচা আলাউদ্দিনের তিনতলা বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকেন। চার বছর আগে তিনি ভুঁইঘর মিছির আলী মাদ্রাসা থেকে হেফজ বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর থেকে বেকার ছিলেন ওমর ফারুক। সম্প্রতি তার সৌদি আরব যাওয়ার ভিসা হয়।