বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাহাড়ধসে ১ দিনে ১২ মৃত্যু, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

  •    
  • ২৮ জুলাই, ২০২১ ১১:০৬

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী ভিলেজার পাড়ায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে ধসে পড়ে পাহাড়। সেই পাহাড়ের মাটি এসে পড়ে একটি বসতবাড়ির ওপর। এতে চাপা পড়ে প্রাণ যায় ওই বাড়ির ঘুমন্ত পাঁচ শিশুর।

কক্সবাজারে বৃষ্টি হচ্ছিল এক সপ্তাহ ধরেই। বৃষ্টির বেগ বাড়ে গত তিন দিন। এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ে সোমবার রাত থেকে।

ওই রাত থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চারটি পাহাড়ধসের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে শিশুসহ ১২ জন। অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

জেলা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান মঙ্গলবার দুপুরে জানান, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে গত তিন দিন ধরে চলছে এই ভারী বর্ষণ। কক্সবাজারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এ পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন থাকবে।

পাহাড়ধস

মঙ্গলবার সকালে খবর আসে জেলার উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে মা-শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ধসে পড়া মাটির চাপায় আহত হয় সাত থেকে আটজন।

প্রাণ হারানো পাঁচজন হলেন দিল বাহার ও তার দুই সন্তান তিন বছরের আব্দুর রহমান ও দুই বছরের আয়েশা সিদ্দিক এবং নুর বাহার ও শফিউল আলম।

অতিরিক্ত ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসৌদ্দজা নয়ন জানান, পাহাড়ধসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে ১০ নম্বর ক্যাম্পে। আর কাছাকাছি সময়ে ৮ নম্বর ক্যাম্পে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে।

এর আগে সোমবার গভীর রাতে মহেশখালীতে পাহাড়ধসে এক নারীর মৃত্যু হয়। ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের উত্তর সিপাহিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

ওই নারীর নাম মোরশেদা বেগম। তিনি উত্তর সিপাহিপাড়ার আনছারুল করিমের মেয়ে।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হাই জানান, রাতে ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসে ঘরের সীমানা দেয়াল ভেঙে যায়। এ সময় ঘুমন্ত অবস্থায় মোরশেদা চাপা পড়েন। সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়।

এরপর মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যাংয়ের এক নম্বর ওয়ার্ডে পাহাড়ধসের আরও একটি ঘটনা ঘটে। সেখানে পাহাড়ের মাটিচাপায় মৃত্যু হয় রকিম আলী নামের এক বৃদ্ধের।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী।

এখানেই শেষ নয়। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী ভিলেজার পাড়ায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে ধসে পড়ে পাহাড়। সেই পাহাড়ের মাটি এসে পড়ে একটি বসতবাড়ির ওপর। এতে চাপা পড়ে প্রাণ যায় ওই বাড়ির ঘুমন্ত পাঁচ শিশুর।

হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী নিউজবাংলাকে জানান, বাড়িটি সৈয়দ আলমের। সেখানে পাহাড়ধসে মারা গেছে সৈয়দ আলমের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সন্তানের বয়স ১৫; ছোটজনের বয়স ৪ বছর।

চেয়ারম্যান রাশেদ জানান, ঘটনার সময় সাত মাসের সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে কুঁড়েঘরের একটি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন সৈয়দ আলম। পাশের কক্ষে ঘুমাচ্ছিল তার অন্য পাঁচ সন্তান। পাহাড়ধসের পর স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে সৈয়দ আলম বের হতে পারলেও তার অন্য সন্তানরা চাপা পড়ে মারা যায়।

রাশেদ আরও জানান, পাহাড়ধসের শঙ্কায় বিকেল থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। তারপরও লোকজন বাড়ি ছেড়ে যেতে চায় না। মোটামুটি জোর করেই এক হাজারের বেশি মানুষকে সাইক্লোন শেল্টার ও সরকারি বিদ্যালয় ভবনে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

পাহাড়ধসে জেলার মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর ও হিমছড়ির মাঝামাঝি অংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

রামু উপজেলার আওতাধীন এলাকায় হিমছড়ির পয়েন্টের কাছাকাছি অংশে পাহাড়ধসের এ ঘটনা ঘটে।

রামু উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রণয় চাকমা জানান, মধ্যরাতে পাহাড়ধস হওয়ায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে সড়কে মাটি এসে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাত থেকে ফায়ার সার্ভিস মাটি সরানোর কাজ শুরু করেছে।

ফায়ার সার্ভিস রাতে জানায়, সড়কটি পুরোপুরি স্বাভাবিক করতে মাটির একটি অংশ এরই মধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাকিটুকু সকালের মধ্যে সরানো হয়ে যাবে।

প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

গত তিন দিনের ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার।

এর মধ্যে উখিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালীর শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। সড়কে পানি ওঠায় চলাচলে দুর্ভোগ বাড়ছে।

ক্ষতির শিকার হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফের বেশ কয়েকটি শরণার্থী শিবির। এসব শিবিরের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি এলাকায় মাইকিংও চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরী জানান, উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা, সাংবারাংয়ের বেশ কয়েকটি গ্রামের সাত শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

মহেশখালীতে নিম্নাঞ্চলের আউশ ও আমন ধানের জমিতে পানি জমেছে। চকরিয়ায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

কুতুবদিয়া ও পেকুয়া উপকূলীয় বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়।

উখিয়ার কুতুপালং ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, সোমবার থেকে টানা বৃষ্টিতে কুতুপালংয়ের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকেছে। বিশেষ করে কুতুপালং বাজারের একাংশ, পূর্ব পাড়া, পশ্চিমের বিল পানিতে তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

অতিরিক্ত ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসৌদ্দজা বলেন, ভারী বর্ষণে কিছু ক্যাম্পে পানি ঢুকেছে। তবে কতটি ক্যাম্পের এ অবস্থা, তা জানতে সময় লাগবে। বিচ্ছিন্ন কিছু পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে।

অন্যদিকে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকার ফাতের ঘোনা, সৈকত পাড়ার ৫১ একর সংলগ্ন বাঘঘোনা, ঘোনার পাড়া, বৈদ্য ঘোনা, পাহাড়তলী, ইসলামাবাদ, বাদশাঘোনা, ইউছুফের ঘোনা, সাহিত্যিকা পল্লী, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, বাস টার্মিনাল, আদর্শগ্রাম, উত্তরণের আশপাশ ও জেলগেট এলাকায় পাহাড়ধসের শঙ্কায় আছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মামুনুর রশিদ জানান, ভারী বর্ষণে কোথায় কী ক্ষতি হচ্ছে তা খবর নেয়া হচ্ছে। এ জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে।

তিনি বলেন, পাহাড় কাটা রোধে জেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চলছে। পাহাড় ধস নিয়ে জেলা প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত আছে।

এ বিভাগের আরো খবর