নিজেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাহসী নারী হিসেবে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নাম মিলিয়ে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা বিতর্কিত রাজনীতিবিদ হেলেনা জাহাঙ্গীর।
সমালোচনার মধ্যে হেলেনার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে চাকরিজীবী লীগ নিয়ে স্ট্যাটাসটি আর দেখা যাচ্ছে না। পোস্টটি ডিলিট করে ফেলেছেন কি না, নিউজবাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ওটা প্রাইভেসি দিয়ে রেখেছি আমার ওয়ালে।
‘আমি রিমুভ করব কেন? আমার কি সাহস নেই বুকে? আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে সাহসী নারী। যেহেতু এটা নিয়ে কথা হচ্ছে, আমি এটা হাইড করে রেখেছি।’
হেলেনার ইউটার্ন
‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে সংগঠনটির জন্য দুদিন আগে সাফাই গাইলেও তুমুল সমালোচনার মধ্যে হেলেনা জাহাঙ্গীর এখন বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই।
এ বিষয়ে সোমবার সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে দেয়া এক স্ট্যাটাসে হেলেনা লিখেছেন, ‘আমি হেলেনা জাহাঙ্গীর গতকাল থেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি যে, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ চাকরিজীবী লীগ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে বিভিন্নমুখী সংবাদ প্রচার হচ্ছে।
‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ ধরনের কোনো সংগঠনের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। আমি ছোটবেলা থেকেই পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। বর্তমানে আলোচিত বিষয়টি আমি দলীয় সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে আমার বক্তব্য তুলে ধরে সাইবার ক্রাইম আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে।’
সম্প্রতি নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠন। এটির কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নাম আসে হেলেনা জাহাঙ্গীরের। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাহবুব মনিরকে। তাদের নাম-সংবলিত পোস্টার ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
পোস্টারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। সংগঠনটির দাবি, দুই-তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ নিয়ে গত শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুক্রবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে চাকরিজীবী লীগ গঠনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন হেলেনা।
তিনি লিখেছেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় আর সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার প্রত্যাশায় বাংলাদেশের আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ।
‘নামটি অনেকের কাছে নতুন মনে হলেও এটি অনেক দিন ধরে কাজ করা একটি সংগঠন। এটির বয়স ৩ থেকে ৪ বছর। অনেক দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে সারা বাংলাদেশব্যাপী। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৩২ জেলায় অফিসসহ কমিটি দেয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে এই সংগঠনটির সদস্য লক্ষ লক্ষ। অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনী, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ব্যাংকার, বেসরকারি অনেক চাকরিজীবী এখানে আছেন।’
চাকরিজীবী লীগ নিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর তার ফেসবুক পেজে এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলেনতিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রচার-প্রচারণা নেই হয়তো এই জন্য অনেকের অজানা। কিছুদিনের মধ্যেই সবাই জেনে যাবেন। কারণ, প্রতিদিন জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে আগামীর কার্যক্রম আলোচনা চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই এটি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে দেশ ও জনগণের জন্য নিবেদিত সহায়তাকারী সংগঠন হিসেবে কাজ করবে।’
পরের দিনই হেলেনাকে দলের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়। আর তাকে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদ থেকে আরও আগেই বাদ দেয়া হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
এর মধ্যেই এক স্ট্যাটাসে হেলেনা জানালেন, আলোচিত চাকরিজীবী লীগের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এই স্ট্যাটাস দেয়ার পর হেলেনা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
চাকরিজীবী লিগ নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে হেলেনা জাহাঙ্গীরের আগের অনেক ফেসবুক পোস্টও আলোচনায় আসছেহেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘চাকরিজীবী লীগের পোস্টার আমি বানাইনি। আমার অফিসও বানায়নি বা আমার অর্ডারে বানানো হয়নি। এখন আপনি একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আমার, আপনি একটি পোস্টার বানাতেই পারেন। প্রায় ৫ কোটি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, তাদের সবাইকে কি কন্ট্রোল করা সম্ভব আমার একার পক্ষে?’
চাকরিজীবী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ইমন হেলেনা জাহাঙ্গীরের সংগঠনের সভাপতি হওয়ার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হেলেনা বলেন, ‘ওনাকে (ইমন) বলেন, ভাই আপনি একটি কাগজপত্র পেপার্সে আপার সাইন করা এগুলো দেখান একটু।’
তাহলে চাকরিজীবী লীগ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস কেন দিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হেলেনা বলেন, ‘আমি যদি আপনাকে ভালোবাসি, বা যদি পরিচিত হন বা আমাকে অনুরোধ করেন যে আপা আমি একটু বিপদে পড়েছি, আমাকে আপনি একটু প্রচার করে দেন। যেহেতু আমার ২০ লাখ ফলোয়ার আছে ফেসবুকে।
‘আমি তো সমাজের জন্য কাজ করি, মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। আমি তো সেই পোস্টে কোথাও লিখি নাই যে আমি চাকরিজীবী লীগে যোগ দেব ভবিষ্যতে, বা দায়িত্ব নেব এটাও তো কোথাও বলা নেই। আর আমি তো পোস্ট পদবি পাওয়ার পরেই আমার বায়োতে লিখে ফেলি, এটাও তো লিখিনি। সংগঠনকে আগে দেখব-বুঝব, এখানে থাকা যাবে কি না। আর আওয়ামী লীগ নাম তো কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। আমি তো দুই-তিন মাস অ্যানালাইসিস না করে যাব না কোনো সংগঠনে।’
এ সময় নিউজবাংলা জানতে চায়, তাহলে কি আপনার সাথে চাকরিজীবী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই? জবাবে হেলেনা বলেন, ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট নেই। কোনোভাবেই নেই। কোনোমতেই নেই। আমি কি আপনাকে একটু সাপোর্ট দিতে পারি না। আপনি যদি বলেন, আপা এই ব্যাপারে একটু অমুককে বলে দেন। তাহলে কি আমি বলে দেব না? আমি তো মানুষের উপকার করতে গিয়েই এ ধরনের বিপদে পড়ছি।
‘তারা বিশাল একটি সংগঠন করেছে, তাদের নাকি থানা কমিটি আছে, জেলা কমিটি আছে। তখন আমি বলেছি, ঠিক আছে আমি এটার অনুমোদন নেয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারি। এখন তো লকডাউন, কারও সঙ্গে তো কথাও বলা যাবে না, তাই না।’
চাকরিজীবী লীগ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটি থেকে বরখাস্ত করা হয়এ সময় আওয়ামী লীগের উপকমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন হেলেনা। বলেন, ‘এখনও কোনো চিঠি তিনি পাননি।
‘কোথায় অব্যাহতি? আমি তো এখনও আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য। আমাকে তো কোনো শোকজ করা হয়নি। একটা পদ থেকে বাদ দিতে হলে তো আগে শোকজ করতে হবে। অনেক নিয়মকানুন আছে, আমি কোনো নিয়ম ভঙ্গ করেছি, সেটা আমাকে প্রমাণ করতে হবে। তারপর আমাকে বাদ দেয়া হবে। আমি চিঠি পাইনি, শোকজ পাইনি, কিছুই তো হয়নি।’