শাটডাউনের ফেরে পড়ে মা ও যমজ বোন টুপুরের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া টাপুর বাবার হাত ধরে রাজধানীতে আসছে শনিবার। সব ঠিক থাকলে দুই দিন পর পরিবারের এই বিচ্ছিন্ন সদস্যরা এক হবে।
পরিবারটিকে মিলিয়ে দেয়ার এই উদ্যোগ নিয়েছে ‘হৃদয়ে ঝালকাঠি’ নামের একটি স্থানীয় সংগঠন। ভাড়া গাড়িতে করে ঝালকাঠি থেকে শনিবার সকালে সুশান্ত শীল ও তার ১৩ মাসের মেয়ে টাপুরকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরের উদ্দেশে রওনা হবেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকরা। সেখানেই আছেন সুশান্তের স্ত্রী সুমা রানী শীল ও তাদের যমজ কন্যা টুপুর।
কঠোর শাটডাউন শুরুর আগে স্ত্রী সুমা শীলকে নিয়ে বরিশাল লঞ্চঘাটে আসেন সুশান্ত শীল। ইচ্ছা ছিল স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে যাবেন রাজধানীর মিরপুরের শ্বশুরবাড়িতে।
সে সময় সুশান্তের কোলে ছিল টাপুর ও সুমার কোলে ছিল টুপুর। ভিড়ের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা দুজন উঠে পড়েন দুই লঞ্চে। পাশে স্ত্রী-কন্যাকে না পেয়ে দ্রুত নেমে পড়েন সুশান্ত।
ঘাটে তিনি যখন হন্যে হয়ে তাদের খুঁজছিলেন, তখন বেজে ওঠে মোবাইল ফোন। অপর প্রান্ত থেকে স্ত্রী জানান, তিনি আছেন সুন্দরবন লঞ্চে। কিন্তু তখন আর ঢাকায় যাওয়ার উপায় নেই সুশান্তের। কারণ ঘাট ছেড়ে যায় সব লঞ্চ। পরে টাপুরকে নিয়ে ঝালকাঠির কিস্তাকাঠি আবাসনের বাড়িতে ফিরে আসেন সুশান্ত।
এ বিষয়ে নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশ হলে শুক্রবার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির কর্মকর্তারা। তারা সুশান্ত ও টাপুরের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ঘাটে স্ত্রী ও এক মেয়েকে হারিয়ে আরেক মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে সুশান্ত
সংগঠনটির সভাপতি আসিফ ইকবাল নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে শুক্রবার রাতে যান ঝালকাঠি সদরের উত্তর কিস্তাকাঠি আবাসনের ২৪ নম্বর ব্যরাকে। সেখানেই থাকেন সুশান্ত।
ব্যারাকে গিয়ে দেখা গেল, মেয়েকে সুজি বানিয়ে খাওয়াচ্ছিলেন সুশান্ত। তিনি জানালেন, প্রতিবার ঘুম থেকে উঠেই মা ও বোনকে খুঁজতে থাকে টাপুর। তিনিও মেয়েকে একা সামলাতে, তাকে খুশি রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন।
ওই সময় সংগঠনের কর্মকর্তা আসিফ তাকে রাজধানীতে স্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দেন। তাতে মুহূর্তেই রাজি হয়ে যান সুশান্ত। তবে আবদার করেন, ঢাকা যাওয়ার বিষয়টি তার স্ত্রী যেন না জানে। তিনি গিয়ে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে চমকে দিতে চান।
আসিফ ইকবাল বলেন, ‘হৃদয়বিদারক এমন ঘটনাটির সংবাদ আমি নিউজবাংলায় দেখে নিজেকে থামিয়ে রাখতে পারিনি। টাপুর, টুপুরকে এক জায়গায় করতে পারলে আমার হৃদয় শান্তি পাবে।
‘তাই আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আমি এবং আমার অন্যান্য কর্মকর্তা ও উপদেষ্টাদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে এই দায়িত্ব নিয়েছি।’