শাটডাউনের ফেরে পড়ে টাপুর বাবার কাছে, টুপুর মায়ের কাছে। কাছে যাওয়ার আকুতি আছে, কিন্তু উপায় নেই।
শিশু দুটির বয়স সবে ১৩ মাস। লঞ্চে করে বাবা-মায়ের বরিশাল থেকে ঢাকায় ফেরার চেষ্টায় আলাদা হয়ে যায় তারা।
কঠিন পরিস্থিতিতেও টুপুরকে নিয়ে সহি-সালামতেই ঢাকায় পৌঁছতে পেরেছেন তার মা। তার বাসা মিরপুরে।
অন্যদিকে টাপুর আছে বাবার সঙ্গে। প্রথমবারের মতো মায়ের সান্নিধ্য ছাড়া রাতটা তার খুব একটা খারাপ কেটেছে, এমনটা বলা যাবে না।
কখন কী করতে হবে, মেয়ের চাহিদা কীভাবে পূরণ করতে হবে, ফোন করে স্ত্রীর কাছ থেকে জেনে নিয়েছেন সুশান্ত শীল।
তবে তার স্বাভাবিক জীবনাচরণে ঘটেছে বিঘ্ন। মেয়েকে দেখাশোনা করতে দিনভর থাকতে হয়েছে বাসায়।
কঠোর শাটডাউন শুরুর আগে স্ত্রী সুমা শীলকে নিয়ে বরিশাল লঞ্চঘাটে আসেন সুশান্ত শীল। ইচ্ছা ছিল বউ-বাচ্চাকে নিয়ে যাবেন রাজধানীর মিরপুরের শ্বশুরবাড়িতে।
কিন্তু যাত্রীর ভিড়ের কারণে দুই কন্যাকে নিয়ে মা ও বাবা উঠে পড়েন দুই লঞ্চে। পাশে স্ত্রী-কন্যাকে না পেয়ে দ্রুত নেমে পড়েন সুশান্ত।
ঘাটে তিনি যখন হন্যে হয়ে তাদের খুঁজছিলেন, তখন বেজে ওঠে মোবাইল ফোন। অপর প্রান্ত থেকে স্ত্রী জানান, তিনি আছেন সুন্দরবন লঞ্চে। কিন্তু তখন আর ঢাকায় যাওয়ার উপায় নেই সুশান্তের। কারণ, ঘাট ছেড়ে যায় সব লঞ্চ। পরে টাপুরকে নিয়ে ঝালকাঠির কিস্তাকাঠি আবাসনের বাড়িতে ফিরে আসেন সুশান্ত।
পথিমধ্যে তার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের। তিনি তখন মেয়ের জন্য দোকানে প্যাকেট দুধ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত।
সুশান্ত তখন বলেন, ‘এই বাচ্চা সকালে ঘুম থেকে উঠেই মা মা করে ডাকবে। এদিকে শাটডাউন শুরু। আমি তো ঢাকাতেও যেতে পারব না।’
টাপুরের খোঁজ নিতে শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নিউজবাংলার প্রতিবেদক যান সুশান্তের কিস্তাকাঠি আবাসনে ২৪ নম্বর ব্যারাকের ঠিকানায়।
৬ নম্বর ঘরে টোকা দিতেই ম্লানমুখে দরজা খোলেন সুশান্ত। ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায়, বিছনায় ঘুমিয়ে আছে ছোট্ট টাপুর।
সুশান্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাতে বাসায় ফেরার পর বেশ কান্নাকাটি করেছে মেয়েটি। তারপর প্যাকেট দুধ গুলিয়ে খাইয়েছি। রাতে ভালো ঘুমিয়েছে। সকালে বিস্কুট-দুধ আর দুপুরে স্যালাইন পানি খাইয়ে দিয়েছি। তারপর ঘুমিয়ে পড়েছে, এখনও ওঠেনি।’
টুপুর কেমন আছে, জানতে চাইলে তিনি ফোন দেন শ্বশুরবাড়িতে। স্ত্রী সুমা ফোনে সুশান্তকে জানান, টুপুর সারা দিন কমবেশি কান্নাকাটি করেছে। ঘুরেফিরে যেন তার বোনকে খুঁজছে। জবাবে সুশান্ত মেয়েকে নিয়ে দ্রুত ঝালকাঠি ফেরার তাগাদা দেন। সুমাও তাকে ঢাকায় যেতে বলেন।
কিন্তু শাটডাউনের মধ্যে তা কীভাবে সম্ভব হবে, সেই প্রশ্নে নীরব থাকেন দুজনই।
প্রায় আধা ঘণ্টা এই প্রতিবেদক অবস্থান করেন সুশান্তের বাড়িতে। এ সময়ে একবারও ঘুম ভাঙেনি মেয়েটির। স্বপ্নে কি সে টুপুরের সঙ্গে খেলছে?