বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দাদির মামলায় জামিন হয়নি মায়ের, অন্যের জিম্মায় ২ শিশু

  •    
  • ১৮ জুলাই, ২০২১ ২০:৫৭

দাদির করা মামলায় আড়াই বছরের গালিফ ও ১২ বছরের আলিফের বাবাও পলাতক। এ অবস্থায় মায়ের জামিন না হওয়ায় পাঁচ দিন অনেকটা নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছে শিশু দুটি। তারা বর্তমানে বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাফিজের জিম্মায় রয়েছে।

বরগুনায় পারিবারিক কলহে দাদির করা মামলায় মা অনিতা জামান কারাগারে থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছে দুই শিশু।

বরগুনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে রোববার অনিতার জামিন আবেদনের ভার্চুয়াল শুনানি হলেও তাকে জামিন দেননি বিচারক। সোমবার পরবর্তী শুনানির দিন দেন বিচারক নাহিদ হাসান।

দাদির করা মামলায় আড়াই বছরের গালিফ ও ১২ বছরের আলিফের বাবাও পলাতক। এ অবস্থায় মায়ের জামিন না হওয়ায় পাঁচ দিন অনেকটা নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছে শিশু দুটি। তারা বর্তমানে বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাফিজের জিম্মায় রয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, দুই শিশুর বাবা-চাচা ও ফুফুদের মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ মামলা হয়েছে। দুই শিশু এবং করোনার সময়ে একজন নারীর অসহায়ত্ব বিবেচনায় আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন। তবে আদালত জামিন দেয়নি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মিসকাত সাজ্জাদ জানান, শিশু দুটির বাবা মনিরুজ্জামান জুয়েল ও মা অনিতার সঙ্গে শাশুড়ি আলেয়া বেগম ও ননদ মনিরার দ্বন্দ্ব চলছিল। এ ঘটনায় মারধরের অভিযোগ এনেছেন আলেয়া। তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আদালত সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, শিশু দুটির বাবা জুয়েল বরগুনা সদর উপজেলার খাজুরতলা এলাকার প্রয়াত মুজাফফর হোসেনের ছেলে। তিনি গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে তিনি সেখানেই বসবাস করতেন। আর জুয়েলের মা আলেয়া বেগম ও বোন মনিরা বেগম থাকেন গ্রামের বাড়িতে।

তারা আরও জানান, করোনায় অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়ায় সম্প্রতি জুয়েল তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকে গ্রামের বাড়িতে রেখে যান। এরপর দাদি আলেয়া ও ফুফু মনিরার সঙ্গে সম্পদের বন্টন নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন শিশু দুটির বাবা-মা। এ নিয়ে আলেয়া নাতিসহ ছেলে ও পুত্রবধূকে বাড়ি ছাড়তে বলেন।

অনিতার দাবি, ওই বাড়ি তার বাবার টাকায় নির্মিত। এ নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে তার তর্ক হয়। পরে ১২ জুন আলেয়া বড় ছেলে জুয়েল, তার স্ত্রী আনিতা ও আরেক ছেলে কামরুজ্জমান শোয়াইবকে আসামি করে বরগুনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। এরপর ঘরে তালা দিয়ে মেয়ে মনিরার বাড়িতে অবস্থান নেন।

তিনি জানান, অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে না পারায় ২৬ জুন সকালে স্থানীয় গণ্যমান্যদের সহায়তায় তালা ভেঙে তিনি ওই বাড়িতে ঢুকতে গেলে শাশুড়ি ও ননদ তাকে বাধা দেন। ওই সময় তর্ক ও ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে ঘরের দেয়ালে আঘাত পেয়ে আলেয়ার দাঁত ভেঙে যায়।

এ ঘটনায় আলেয়া নিজের দুই ছেলে জুয়েল ও কামরুজ্জামান, পুত্রবধূ অনিতা এবং নাতি আলিফের বিরুদ্ধে বরগুনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে আরেকটি মামলা করেন। আলিফের প্রকৃত বয়স ১২ হলেও এ মামলায় তাকে ১৮ বছর দেখানো হয়।

এমন অবস্থায় আইনজীবীর পরামর্শে গত বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আনিতা। পরে বরগুনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

মা কারাগারে, বাবা পলাতক এমন অবস্থায় নিরাশ্রয় আলিফ শনিবার ছোট ভাই গালিফকে নিয়ে বরগুনা টাউন হল এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল। তাদের অবস্থার কথা জেনে স্থানীয় কয়েকজন তরুণ একটি ব্যনার লিখে দিলে তা নিয়ে তারা অগ্নিঝড়া একাত্তরের পাদদেশ বসে পড়ে।

বিকেলে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মানবিক কারণে বরগুনা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি সোহেল হাফিজ ও তার স্ত্রী জাফরিন নিতু শিশু দুটিকে নিজেদের বাসায় নিয়ে যান।

আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একদিকে আলিফ-গালিফের দাদি ও ফুফুরা। অন্যদিকে তাদের বাবা-মা। জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের কারণে পারিবারিকভাবে দুই পক্ষের বিরোধ চরমে পৌঁছানোয় উভয়পক্ষই মারমুখি হয়ে উঠেছে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শিশু দুটির অসহায়ত্বের কথা ভেবে মানবিক কারণে সোহেল হাফিজ ও তার স্ত্রী আপাতত তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন। বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তাদের জন্য সব রকমের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’

এ বিভাগের আরো খবর