বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই শিশুর চিকিৎসা বন্ধ করোনায়

  •    
  • ১৭ জুলাই, ২০২১ ১৯:২০

সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম বলেন, ‘ও হাঁটতে পারে না। দুই পা বাঁকা হয়ে গেছে। ডান হাতে কোনো জোর পায় না। কিছু ধরতে পারে না। ডান কানেও কিছু শোনে না। মা-বাবা ডাকা ছাড়া আর কোনো কথা বলতে পারে না। তাই সব সময় আমাকে তার খেয়াল রাখতে হয়।’

মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে জন্ম নেয়া মাগুরার শিশু সুরাইয়ার বয়স এখন ৬। প্রাণ নিয়ে পৃথিবীতে আসতে পারলেও, স্বাভাবিক জীবন নেই তার। গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত ডান চোখ তার নষ্ট, হাত-পাও অচল। দেশে করোনাভাইরাস আসার পর থেকে তার চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে আছে। এ নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগম। গুলি লাগে তার পেটে। সে রাতেই মাগুরা সদর হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে বের করা হয় গুলিবিদ্ধ নবজাতককে। দেশজুড়ে আলোচিত হয় এ ঘটনা।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপে নবজাতক সুরাইয়া ও মা নাজমা বেগমের চিকিৎসা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গুলি লাগায় সে সময়ই সুরাইয়ার ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা পরে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ধীরে ধীরে দেখা দেয় অন্যান্য জটিলতাও।

এভাবেই ছয় বছর পার করল সুরাইয়া।

কেমন আছে সুরাইয়া? তার খোঁজে নিউজবাংলার প্রতিবেদক তাদের বাড়িতে যান। কথা হয় তার মা-বাবার সঙ্গে।

সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম বলেন, ‘ও হাঁটতে পারে না। দুই পা বাঁকা হয়ে গেছে। ডান হাতে কোনো জোর পায় না। কিছু ধরতে পারে না। ডান কানেও কিছু শোনে না। মা-বাবা ডাকা ছাড়া আর কোনো কথা বলতে পারে না। তাই সব সময় আমাকে তার খেয়াল রাখতে হয়।’

নাজমা জানান, সুরাইয়ার ডান চোখ নষ্ট হওয়ার পর চিকিৎসকরা বলেছিলেন, তাতে পাথরের চোখ লাগিয়ে দেয়া হবে। সেটি হয়নি এত বছরেও। ঘটনার পর বছর দুয়েক অনেকেই খোঁজ নিতেন, সাহায্য করতেন। এখন আর কেউ আসে না। তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও হয়নি।

নাজমা বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল থেকে চিকিৎসকরা জানিয়েছে, করোনার সময়ে তারা চিকিৎসা দিতে পারছেন না। জেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য যে ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা ছিল, তা-ও বন্ধ করোনার এই দেড় বছরে। ফলে কোনো চিকিৎসাই আর চলছে না সুরাইয়ার।

মা নাজমা বেগমের সঙ্গে ছয় বছরের শিশু সুরাইয়া

নাজমা আরও বলেন, ‘সুরাইয়ার ওই ঘটনার পর থেকে আমিও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছি। রাতে প্রায় ঘুম আসে না। সেই ভয়ংকর সময়টা চোখ বন্ধ করলে যেন চোখের সামনে ভাসে। তবু মনিরে (সুরাইয়া) ভালোভাবে বড় করে তুলতে চাই। ভাবছিলাম, কত মানুষ ওরে ভালোবাসে। সারা দেশের মানুষ তখন ওর পাশে দাঁড়ানোর জন্য এসেছিল। তখন মনে শক্তি পাইছিলাম। ভাবছিলাম ও সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া চা-দোকানি। তিনি জানান, যা আয় তা দিয়ে এমনিতেই সংসার চলে না। তার ওপর করোনার কারণে বিক্রি কমে গেছে। ধারদেনা করে কোনো রকম দিন কাটে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েরে চিকিৎসা চালিয়ে নিতে চিকিৎসকরা প্রতি ছয় মাস পর পর ঢাকা নিতে বলেছিল। কিন্তু তা আর হয়নি আর্থিক সমস্যার কারণে।

‘প্রথম দুই বছর নিয়েছি। এরপর অনিয়মিত। ঢাকা যাবার জন্য যে পয়সা খরচ হয়, তা আমার জন্য জোগাড় করা কঠিন। তাই যখন টাকা জমাতে পারতাম, তখন কেবল মেয়েকে নিয়ে ঢাকা যেতে পারি। কিন্তু করোনার এই দেড় বছরে ঢাকার ডাক্তাররা বলে করোনা থামলে ওকে যেন ঢাকা নিয়ে যাই।

‘এখন বলেন, করোনা কবে যাবে? আমার মেয়ে তো ছয় বছরে পড়তেছে এই মাসে। ও তো বড় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাকে সবাই প্রায় ভুলে গেছে। কেউ আর খোঁজ নেয় না।’

অভিমানি কণ্ঠে সুরাইয়ার মা-বাবা বলেন, প্রথম দুই বছর নানা সংগঠনের লোকজন এসে সুরাইয়ার জন্মদিন পালন করত। এখন আর কেউ পাশে নেই।

এখন তাদের অপেক্ষা, কবে করোনাকাল শেষ হবে, কবে আবার শুরু হবে মেয়ের চিকিৎসা।

ছয় বছর আগের ওই ঘটনায় নাজমার চাচাশ্বশুর মমিন ভূঁইয়াও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। বোমায় আহতও হয়েছিলেন। পরদিন হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলা এখন বিচারাধীন।

থানা সূত্রে জানা যায়, মামলার ১৭ জন আসামির মধ্যে আজিবর শেখ পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন। অন্যরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। করোনাকালে আদালত বিভিন্ন সময়ে বন্ধ থাকায় মামলার শুনানির নতুন তারিখ ঘোষণা হয়নি বলে জানান মামলার বাদী রুবেল ভূঁইয়া বাকি মিয়া।

এ বিভাগের আরো খবর